শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ফাইল ছবি
দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সংঘাতের গত ৬ দিনে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৩ জন এবং বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন প্রায় ৭ লাখ মানুষ। দুই দেশের কর্মকর্তা ও সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাতে জানা গেছে এ তথ্য।
কম্বোডিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তাসংস্থা এজেন্সি কম্পুচিয়া প্রেস জানিয়েছে, ৭ ডিসেম্বর সংঘাতের শুরু থেকে এ পর্যন্ত কম্বোডিয়ায় নিহত হয়েছেন ১১ জন এবং আহত হয়েছেন ৭৬ জন বেসাামরিক। সেই সঙ্গে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন ২ লাখ ৭৪ হাজার ৪০৩ জন নাগরিক।
গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে কম্বোডিয়ার জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল ম্যালি সোচেতা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সংঘাতে একজন কম্বোডীয় সেনা প্রাণ হারিয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মৃতের যে সংখ্যা প্রকাশ করেছে, সেখানে নিহত ওই সেনাকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে কি না— এখনও স্পষ্ট নয়।
এদিকে শুক্রবার থাইল্যান্ডের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও মুখপাত্র সুরাসান্ত কংসিরি এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, সংঘাতে এ পর্যন্ত ৯ জন থাই সেনা এবং ৩ জন বেসামরিক নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও ১৯০ জন। এছাড়া সংঘাতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে বাড়িঘর ছেড়ে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন ৪ লাখ থাই নাগরিক।
এমারেল্ড ট্রায়াঙ্গল বা পান্না ত্রিভুজ নামের একটি ভূখণ্ড নিয়ে ১১৮ বছর ধরে দ্বন্দ্ব চলছে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে। থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও লাওসের সীমানা মিলিত হয়েছে পান্না ত্রিভুজে। প্রাচীন মন্দির ও ধর্মীয় স্থাপনাসমৃদ্ধ পান্না ত্রিভুজকে থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়া উভয়েই নিজেদের ভূখণ্ড হিসেবে দাবি করে।
এই সংকটের সূত্রপাত গত শতকের প্রথম দশকে। সে সময় ফ্রান্সের উপনিবেশ ছিল কম্বোডিয়া। ১৯০৭ সালে কম্বোডিয়ার একটি মানচিত্র প্রকাশ করে ফ্রান্স, সেখানে পান্না ত্রিভূজকে কম্বোডীয় ভূখণ্ড হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ও প্রদর্শন করা হয়। সেই সময়েই এর প্রতিবাদ জানিয়েছিল থাইল্যান্ড।
১৯৫৩ সালের ৯ নভেম্বর ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীন হয় কম্বোডিয়া; কিন্তু স্বাধীনতার পরও পান্না ত্রিভূজকে নিজেদের দখলে রাখে দেশটির সরকার। ফলে থাইল্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্ক আর স্বাভাবিক হয়নি দেশটির।
দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে সীমান্ত সংঘাতের পর ১৫ বছর আগে যুদ্ধবিরতিতে গিয়েছিল দুই দেশ। কিন্তু গত বছর মে মাস থেকে উত্তেজনা শুরু হয় দু’দেশের মধ্যে। এই উত্তেজনার জের ধরে গত জুলাই মাসের শেষ দিকে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে থাই ও কম্বোডীয় সেনাবাহিনী। ৫ দিনের সেই সংঘাতে নিহত হয়েছিলেন দুই দেশের ৪৮ জন নাগরিক এবং বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানের উদ্দেশে পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন ৩ লাখ মানুষ। পরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় দুই দেশ।
এরপর চার মাসেরও বেশি সময় শান্ত থাকার পর গত ৭ ডিসেম্বর রোববার স্থানীয় সময় দুপুর ২টার পর সীমান্তবর্তী থাই প্রদেশ সি সা কেত-এ ফের সংঘাত উসকে ওঠে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)