শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
আবারও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন শাহবাজ শরীফ। রোববার (৩ মার্চ) দেশটির জাতীয় পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের ভোটে এই পদে নির্বাচিত হন তিনি।
এনিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার পরমাণু শক্তিধর এই দেশটির প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেন প্রভাবশালী শরীফ পরিবারের এই সদস্য। রোববার পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন এবং দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল।
ডনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পিএমএল-এন সভাপতি শাহবাজ শরীফ ২০১ ভোট পেয়ে পাকিস্তানের ২৪তম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন বলে জাতীয় পরিষদের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক ঘোষণা করেছেন। অন্যদিকে পিটিআইয়ের প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থী ওমর আইয়ুব খান পেয়েছেন ৯২ ভোট।
এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এদিন জাতীয় পরিষদের ২৬৬ আসনের মধ্যে ২৬৫টি আসনে ভোট হয়। নির্বাচনে ইমরান খানের দল পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৯২, নওয়াজ শরীফের পিএমএল-এন ৭৫ ও বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির পিপিপি ৫৪টি আসন পেয়েছে। তবে এই নির্বাচনে কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। এ জন্য জোট সরকার গঠন করতে শুরু থেকেই পিপিপি ও অন্য সমমনা দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে আসছিলেন পিএমএল-এন নেতারা। একপর্যায়ে ছয়টি দলের একটি জোট গঠন করে তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের দল পিএমএল-এন।
অন্যদিকে এবারের নির্বাচনে সরাসরি অংশগ্রহণ করতে পারেনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পিটিআই। তাই নির্বাচনে জয়ী পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলে (এসআইসি) যোগ দেন। মূলত জাতীয় পরিষদের সংরক্ষিত আসনের ভাগ পেতে সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলের সঙ্গে জোট করার সিদ্ধান্ত নেয় পিটিআই।
নির্বাচন পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়েও পিএমএল-এন থেকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে বার বার নওয়াজ শরীফ নাম উঠে আসছিল। তবে নির্বাচনের পরে হঠাৎ করে এই দৌড় থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে ছোট ভাই শাহবাজ শরীফের নাম ঘোষণা করেন নওয়াজ। এর আগে ২০২২ সালের এপ্রিলে বিরোধীদের আনা অনাস্থা ভোটে হেরে ইমরান খানের জোট সরকার বিদায় নিলে শাহবাজের নেতৃত্বে বিরোধীরা জোট সরকার গঠন করে। ওই জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এবারও পাকিস্তানে এই ধরনের একটি জোট সরকার গঠন হতে যাচ্ছে।
জাতীয় পরিষদে হট্টগোল
রোববার স্থানীয় সময় বেলা ১১টার দিকে জাতীয় পরিষদে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের ভোট হয়। ভোট উপলক্ষে সকাল গড়াতেই একে একে পার্লামেন্ট ভবনে আসতে শুরু করেন বিভিন্ন দলের সংসদ সদস্যরা। এরপর জাতীয় পরিষদের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিকের সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়। এ সময় কারাবন্দি ইমরান খানের দল পিটিআই এবং পিএমএল-এন ও জোটের শরিক দলের এমপিরা পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিতে শুরু করেন। তাদের এই পাল্টাপাল্টি স্লোগানে জাতীয় পরিষদে হট্টগোল সৃষ্টি হয়।
এ ছাড়া ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জমিয়ত উলেমা-ই-ইসলাম-ফজলের (জেইউআই-এফ) সংসদ সদস্যরা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে জাতীয় পরিষদ থেকে ওয়াক আউট করেন। বেলুচিস্তান ন্যাশনাল পার্টির (বিএনপি) মেঙ্গালের আখতার মেঙ্গল প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচন বর্জন করেছেন। তিনি জাতীয় পরিষদে অবস্থান করলেও ভোট দেননি।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ৯ মার্চ
পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন ইসিপি থেকে জারি করা বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, আগামী ৯ মার্চ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এদিন জাতীয় পরিষদের সদস্যরা দেশের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট বেছে নেবেন।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে মাহমুদ খান আচাকজাইয়ের নাম ঘোষণা করেছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পিটিআই সমর্থিত সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিল (এসআইসি)। শনিবার (২ মার্চ) তাকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে দলটি। মাহমুদ খান পশতুনখোয়া মিলি আওয়ামী পার্টির (পিকেএমএপি) প্রধান। তিনি পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) কো-চেয়ারম্যান আসিফ আলি জারদারির বিরুদ্ধে দেশের শীর্ষ সাংবিধানিক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। আসিফ আলি পাকিস্তান মুসলিম লিগ (পিএমএল-এন) ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের যৌথ প্রার্থী।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)