শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
টানা ১০ মাসেরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের সংঘাত চলছে। চলমান এই সংঘাতে অনেকটা সরাসরি ইসরায়েলের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাজ্য।
একইসঙ্গে গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের বিষয়েও দেশটি নীরব। এছাড়া ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি করার কাজও অব্যাহত রেখেছে দেশটি। এই পরিস্থিতিতে পদত্যাগ করেছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন কর্মকর্তা।
ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি করার অভিযোগে পদত্যাগ করেছেন তিনি। সোমবার (১৯ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রির প্রতিবাদে পদত্যাগ করেছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন কর্মকর্তা। পদত্যাগকৃত ওই কর্মকর্তার নাম মার্ক স্মিথ। সন্ত্রাস দমনে কাজ করা এই কর্মকর্তা বলেছেন, যুক্তরাজ্য সরকার ‘যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকতে পারে’।
মার্ক স্মিথ গত শুক্রবার সহকর্মীদের কাছে লিখেছেন, অফিসিয়াল হুইসেল ব্লোয়িং মেকানিজমসহ পররাষ্ট্র দপ্তরের ‘প্রতিটি স্তরে’ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। তবে তিনি (তার অভিযোগের) মৌলিক স্বীকৃতি ছাড়া আর কিছুই পাননি।
বিবিসি বলছে, মার্ক স্মিথ ডাবলিনের ব্রিটিশ দূতাবাসে কর্মরত ছিলেন। অবশ্য যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও) তার পদত্যাগের বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে। দপ্তরটি বলেছে, ব্রিটিশ সরকার আন্তর্জাতিক আইন সমুন্নত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মার্ক স্মিথের পদত্যাগের ইমেইলটি শত শত সরকারি কর্মকর্তা, দূতাবাসের কর্মী এবং পররাষ্ট্র দপ্তরের মন্ত্রীদের বিশেষ উপদেষ্টাসহ বিস্তৃত তালিকায় থাকা মানুষের কাছে পাঠানো হয়েছে এবং এটি বিবিসিও দেখেছে।
সেখানে স্মিথ বলেছেন, তিনি পূর্বে মধ্যপ্রাচ্যে সরকারের অস্ত্র রপ্তানি লাইসেন্সিং মূল্যায়নে কাজ করেছেন এবং প্রতিদিনই তিনি ও তার সহকর্মীরা গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনের ‘স্পষ্ট এবং প্রশ্নাতীত উদাহরণ’ প্রত্যক্ষ করেছেন।
তিনি লিখেছেন, ‘ইসরায়েলি সরকার ও সেনাবাহিনীর সিনিয়র সদস্যরা প্রকাশ্য গণহত্যার অভিপ্রায় প্রকাশ করেছে, ইসরায়েলি সৈন্যরা ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক সম্পত্তি পোড়ানো, ধ্বংস এবং লুট করার ভিডিও তুলেছে।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘সকল রাস্তা এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, মানবিক সহায়তা অবরুদ্ধ করা হচ্ছে এবং বেসামরিক নাগরিকদের নিয়মিতভাবে পালিয়ে যাওয়ার জন্য কোনও নিরাপদ জায়গা নেই। রেড ক্রিসেন্টের অ্যাম্বুলেন্সে হামলা হয়েছে, স্কুল-হাসপাতালগুলোতে নিয়মিত হামলা করা হচ্ছে। এগুলো যুদ্ধাপরাধ।’
তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাজ্যের অস্ত্র বিক্রি অব্যাহত রাখার কোনও যুক্তি নেই।’
অবশ্য ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও) বলেছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি ইসরায়েল আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে চলছে কি না তা মূল্যায়ন করার জন্য ‘অফিসের প্রথম দিনে’ পর্যালোচনা শুরু করেছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরায়েল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, ইসরায়েলি হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার ১০০ জন নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আরও ৯২ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে মানবাধিকার গোষ্ঠী এবং অন্যান্য সমালোচকরা ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ করার জন্য এবং ইসরায়েলের বর্বর আগ্রাসনের পক্ষাবলম্বনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা দেশগুলোকে অভিযুক্ত করছেন।
প্রসঙ্গত, ইসরায়েলের প্রতি ওয়াশিংটনের অব্যাহত সমর্থন নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরসহ যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি সরকারি সংস্থাজুড়ে গত কয়েক মাসে একের পর এক কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন। এবার তেমনই এক ঘটনা প্রত্যক্ষ করল যুক্তরাজ্যও।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)