বৃহঃস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের চলমান আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্তকে মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কার করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। মঙ্গলবার রাতে ইসায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করা হয়েছে এ তথ্য।
রাষ্ট্রের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে চলা দ্বন্দ্ব এবং তার জেরে পরস্পরের প্রতি আস্থার সংকট থেকেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে এক বার্তায় উল্লেখ করেছেন নেতানিয়াহু। সংক্ষিপ্ত এক বার্তায় এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমার এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মধ্যকার আস্থা ভেঙে গেছে।”
বার্তায় নেতানিয়াহু আরও বলেছেন, “তার (গ্যালান্ত) সঙ্গে আমার যেসব মতপার্থক্য ছিল, সেসব নিরসনের জন্য আমি অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু সেসব চেষ্টা কোনো কাজে তো আসেই নি, উপরন্তু জনগণের সামনে খুবই অগ্রহণযোগ্যভাবে প্রকাশিত হয়েছে।”
“সবচেয়ে বাজে ব্যাপার হলো, বিভিন্ন ইস্যুতে আমাদের মতপার্থক্য শত্রুদেরও নজরে এসেছে এবং তারা এটি উপভোগের পাশাপাশি এ থেকে ফায়দা তোলারও চেষ্টা করছে। তাই আমার সামনে আর কোনো বিকল্প ছিল না।”
অন্যদিকে ইয়োয়াভ গ্যালান্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক সংক্ষিপ্ত বার্তায় বলেছেন, “যেখানে, যে অবস্থাতেই থাকি না কেন, যতদিন বেঁচে আছি— আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিশন থাকবে ইসরায়েল এবং তার নাগরিকদের নিরাপত্তা।”
পরে একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গ্যালান্ত বলেন, তিনটি ইস্যুতে দীর্ঘদিন ধরে নেতানিয়াহুর সঙ্গে মতানৈক্য চলছিল তার। এই ইস্যুগুলো হলো— অতি রক্ষণশীল ইহুদিদের সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্তি, হামাসের কব্জায় থাকা জিম্মিদের উদ্ধারে নেতানিয়াহু এবং মন্ত্রিসভায় তার অনুগতদের উদাসীনতা এবং হামাসের গত ৭ অক্টোবরের হামলার দাপ্তরিক তদন্ত শুরু করা নিয়ে নেতানিয়াহুর গড়িমসি।
টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গ্যালান্ত আরও বলেন, “বিশেষ করে জিম্মিদের মুক্তির ব্যাপারে কোনো প্রকার উদাসীনতা ক্ষমার অযোগ্য। জিম্মিদের স্বজন ও পরিবারের সদস্যরা যে ভয়াবহ দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, শিগগির তার অবসান না হলে পুরো সমাজ ভুল পথে চালিত হবে।”
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে যে বিবৃতিটি দেওয়া হয়েছে, সেখানে গ্যালান্তের অব্যাহতির পাশাপাশি আরও বলা হয়েছে, এখন থেকে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন দেশটির বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ, আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকবেন নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক দল লিকুদ পার্টির অন্যতম জ্যেষ্ঠ নেতা এবং এমপি গিদেওন সা’আর।
নতুন দায়িত্বপ্রাপ্তির পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে ইসরায়েল কাৎজ বলেন, “ইসরায়েলের এবং তার নাগরিকদের রক্ষার গুরুদায়িত্বকে আমি আমার মিশন এবং পবিত্র দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করলাম।”
ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর সাবেক জেনারেল ইয়োয়াভ গ্যালান্ত সেনাবাহিনীতে ৩৫ বছর চাকরি শেষে রাজনীতিতে পদার্পণ করেন, যোগ দেন নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টিতে। নেতানিয়াহু এবং গ্যালান্ত উভয়েই লিকুদ পার্টির ডানপন্থি অংশের নেতা।
গ্যালান্তের সঙ্গে নেতানিয়াহুর দ্বন্দ্বের সূত্রপাত ২০২৩ সালের শুরু থেকে। সে সময় ইসরায়েলের বিচারব্যবস্থার সংস্কারের পদক্ষেপ নিতে চেয়েছিলেন নেতানিয়াহু এবং এর জেরে দেশজুড়ে প্রতিবাদ শুরু হয়েছিল। গ্যালান্ত প্রতিবাদকারীদের পক্ষে ছিলেন।
তবে এখানে আশ্চর্যজনক ব্যাপারটি হলো, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণের দিন গ্যালান্তকে অব্যাহতি দেওয়া। বাইডেন প্রশাসনের কাছে একজন আস্থাভাজন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন গ্যালান্ত। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে প্রায় প্রতিদিন টেলিফোনে কথা হতো তার।
মঙ্গলবার তার অব্যাহতির পর হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্র তাৎক্ষণিকভাবে রয়টার্সকে বলেছেন যে গ্যালান্ত যুক্তরাষ্ট্রের একজন গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ছিলেন, তবে বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গেও সমন্বয়ের ভিত্তিতে কাজ করতে যুক্তরাষ্ট্র আগ্রহী।
এদিকে নেতানিয়াহুর এই সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেছেন ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়াইর লাপিদ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, “এটা পুরোপুরি পাগলামি। নেতানিয়াহু তার নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিরাপদ রাখতে ইসরায়েলের নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা বাহিনীকে বিক্রি করছেন।”
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)