রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ২৯ চৈত্র ১৪৩১
ছবি সংগৃহীত
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তদন্ত কার্যক্রম এবং বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার অপচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে মন্তব্য করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সংশ্লিষ্ট রিপোর্টারদের সঙ্গে চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ের মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বৃহস্পতিবার এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
এ প্রক্রিয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার)-এ সমন্বিত এবং পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের পলাতক সুবিধাভোগীরা বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে তদন্ত কার্যক্রম এবং বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিতভাবে তদন্ত কার্যক্রম এবং প্রসিকিউটরদের সম্পর্কে গুজব বা ভুল তথ্য ছড়ানোর মাধ্যমে বা মিথ্যা অপবাদ প্রদান করে জনমনে বিশেষত শহিদ পরিবারদের বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করে প্রসিকিউশন।
এদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর অভিযোগ আনার লক্ষ্যে বিপুল অর্থ ব্যয়ে ব্রিটেনের বিখ্যাত ল’ ফার্ম ডাউটি স্ট্রিট চেম্বার্সকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ২২ মামলায় (মিস কেস) ১৪১ জন অভিযুক্ত ব্যক্তির মধ্যে ৫৪ জন গ্রেফতার ও ৮৭ জন পলাতক রয়েছেন বলে জানায় প্রসিকিউশন।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে দেড়-দুই হাজারের বেশি মানুষ শহিদ হয়েছেন। ২৫ হাজারের মতো ছাত্র-জনতা আহত হয়েছেন। এসব ঘটনার জলজ্যান্ত প্রমাণ রয়েছে। ট্রাইব্যুনালে আমরা সেটা প্রমাণ করতে সক্ষম হবো এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখেই ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবো।’
প্রসিকিউশনের উপস্থাপিত সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মোট ৩৩৯টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। যেখানে ৩৯টি তদন্ত কার্যক্রম (কমপ্লেইন্ট রেজিস্টার অনুসারে) চলমান। তদন্তের প্রাথমিক সত্যতার আলোকে মিস কেইস হয়েছে ২২টি। এসব মিস কেইসে সর্বমোট অভিযুক্ত ব্যক্তি ১৪১ জন। এর মধ্যে গ্রেফতার রয়েছেন ৫৪ জন, আর ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক ৮৭ জন।
প্রসিকিউশন জানায়, আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানো, চানখারপুল হত্যাকাণ্ড, রামপুরা কার্নিশে ঝুলে থাকা ব্যক্তিকে গুলির প্রেক্ষিতে করা শেখ হাসিনার মামলার তদন্ত শেষ বা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিমে চিফ প্রসিকিউটরসহ মোট ১৭ জন প্রসিকিউটর রয়েছেন। আর ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় মোট তদন্তকারী কর্মকর্তার সংখ্যা বর্তমানে ২৪ জন। তদন্ত সংস্থার সব সদস্যই পুলিশ বাহিনী থেকে প্রেষণে বা চুক্তিভিত্তিক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে আন্দোলন শুরু করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা। এ সংক্রান্ত হাইকোর্টের এক রায়কে কেন্দ্র করে ফুঁসে ওঠে ছাত্রসমাজ। তাদের ওপর সরকারের দমন-পীড়নের প্রেক্ষিতে জনতা এসে শরিক হয় ছাত্রদের সঙ্গে। শুরু হয় ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলন। এ আন্দোলন নির্মূলে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় ক্যাডারদের দিয়ে হত্যা, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে। টানা ৩৬ দিনের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছরের আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনের পতন হয়। আন্দোলন নির্মূলে পরিচালিত মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচার অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)