শুক্রবার, ৩ জানুয়ারী ২০২৫, ২০ পৌষ ১৪৩১


১০২তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ

মিয়ানমার সীমান্ত আমাদের নিয়ন্ত্রণে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত:৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭:২৭

ছবি সংগৃহীত

ছবি সংগৃহীত

মিয়ানমার সীমান্ত বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে আছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার সীমান্ত আমাদের নিয়ন্ত্রণে। আরাকান আর্মি নিয়ে কোনো আশঙ্কার কারণ নেই। পরিস্থিতির কারণে বন্ধু শত্রু হয়ে যায়, আবার শত্রু বন্ধু হয়ে যায়। করণীয় নিয়ে সরকার সজাগ আছে। এ নিয়ে আলোচনা চলছে।’

মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজের (বিজিটিসিএন্ডসি) বীরউত্তম মজিবুর রহমান প্যারেড গ্রাউন্ডে বিজিবির ১০২তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ভারতীয় সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) যাতে কোনো অবস্থাতেই পিঠ নয়, বুক দেখায়, সে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি সীমান্ত হত্যার পেছনে দুই প্রান্তের খাসিয়া সম্প্রদায় দায়ী।

এর আগে সকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে সশস্ত্র সালাম প্রদানের মধ্য দিয়ে নবীন সৈনিকদের শপথ গ্রহণ ও প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নবীন সৈনিকদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনামূলক ভাষণ প্রদান করেন।

ভাষণের শুরুতে তিনি বিজিবির সেই সব অকুতোভয় সদস্যদের, যারা ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশমাতৃকার জন্য জীবন উৎসর্গ করে গেছেন তাদেরকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। একইসঙ্গে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী বিজিবির দুইজন বীরশ্রেষ্ঠ, ৮ জন বীরউত্তম, ৩২ জন বীরবিক্রম এবং ৭৮ জন বীরপ্রতীক খেতাবে ভূষিত বীরসহ ৮১৭ জন অকুতোভয় বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।

তিনি গত জুলাই-আগস্ট মাসে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বিজিবি সদস্যসহ ছাত্র-জনতা ও নিরাপত্তা বাহিনীসহ সব শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন, যাদের মহান আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে নতুন বাংলাদেশ। পাশাপাশি আন্দোলনে বিজিবি সদস্যসহ আহত সব ছাত্র-জনতার আশু সুস্থতা কামনা করেন।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সবার আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং সুদক্ষ নেতৃত্বে এই বাহিনী আজ একটি সুসংগঠিত, চৌকস, সুশৃঙ্খল ও পেশাদার দেশপ্রেমিক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। একইভাবে এই বাহিনীর সৃষ্টিলগ্ন থেকে এর উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে যারা অবদান রেখেছেন তাদের সবাইকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করি।

বিজিবি ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ হিসেবে বাংলাদেশের ৪ হাজার ৪২৭ কি.মি. দীর্ঘ সীমান্ত সুরক্ষা, মাতৃভূমির অখণ্ডতা ও নিরাপত্তা বিধানের পাশাপাশি সীমান্তে চোরাচালান ও মাদক পাচাররোধ, নারী ও শিশু পাচারসহ যেকোনো আন্ত:সীমান্ত অপরাধ দমন, বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় অত্যন্ত দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে সবার আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।

নবীন সৈনিকদের উদ্দেশ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘শৃঙ্খলা হচ্ছে সৈনিক জীবনের অলংকার। আদেশ ও কর্তব্য পালনে যে কখনও পিছপা হয় না সে-ই প্রকৃত সৈনিক। সততা, বুদ্ধিমত্তা, নির্ভরযোগ্যতা, আনুগত্য, তেজ ও উদ্দীপনা একটি বাহিনীর শৃঙ্খলা ও পেশাগত দক্ষতার মাপকাঠি।’

নবীন নারী সৈনিকদের উদ্দেশ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় মহান দায়িত্ব পালনে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সমান ভূমিকা রেখে চলেছে। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে মহীয়সী নারীদের অংশগ্রহণ, অবদান ও আত্মত্যাগ অবিস্মরণীয়। আজ নারীরা বিভিন্ন অঙ্গণে যথাযথ যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতার স্বাক্ষর রাখছেন।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নারী সৈনিকদের দেশ মাতৃকার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দৃপ্ত শপথ নিয়ে বিজিবির সার্বিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় গতিশীল ভূমিকা রাখাসহ বাহিনীর সুনাম সুখ্যাতি বৃদ্ধিতে সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান। অন্যান্য বাহিনীর নারী সৈনিকদের মতো বিজিবির নারী সৈনিকরাও কর্মক্ষেত্রে তাদের যোগ্যতা ও দক্ষতা প্রমাণে সমভাবে সার্থক হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বিজিবি’র নবীন সৈনিকদের প্রদর্শিত তেজোদ্দীপ্ত কুচকাওয়াজের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন এবং নতুন জীবনে পদার্পণের শুভলগ্নে তাদেরকে স্বাগত জানান।

নবীন সৈনিকরা এসব গুণাবলির প্রতিফলন ঘটিয়ে বাহিনীর ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বিজিবি’র চারটি মূলনীতি-‘মনোবল, ভ্রাতৃত্ববোধ, শৃঙ্খলা ও দক্ষতা’-এ উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত হয়ে বিজিবি’র ওপর অর্পিত দায়িত্ব সুশৃঙ্খল ও সূচারুরূপে পালন করে দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষার সুমহান দায়িত্ব পালনে সদা জাগ্রত থাকতে আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, পুলিশ বাহারুল আলম এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের সামরিক ও বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, স্থানীয় সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ১০২তম রিক্রুট ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণ গত ৩০ জুলাই ২০২৪ তারিখে বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজ (বিজিটিসিএন্ডসি)-এ শুরু হয়। প্রশিক্ষণ ভেন্যুতে সর্বমোট ৬৯৫ জন রিক্রুটের মধ্যে ৬৪৯ জন পুরুষ এবং ৪৬ জন নারী রিক্রুট মৌলিক প্রশিক্ষণ সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছে। দীর্ঘ ২৩ সপ্তাহের অত্যন্ত কঠোর ও কষ্টসাধ্য প্রশিক্ষণ সফলভাবে শেষ করে মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ ও সমাপনী কুচকাওয়াজের মাধ্যমে তাদের সৈনিক জীবনের শুভ সূচনা হলো।

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)
আরো পড়ুন

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

নামাজের সময়সূচি

ওয়াক্ত সময়সূচি
ফজর ০৫:২০ ভোর
যোহর ১২:০২ দুপুর
আছর ০৩:৪৭ বিকেল
মাগরিব ০৫:২৬ সন্ধ্যা
এশা ০৬:৪৪ রাত

শুক্রবার ৩ জানুয়ারী ২০২৫