সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ৬ মাঘ ১৪৩১
গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, সরকার এতই যোগ্য যে, থানা থেকে ওসি পালিয়ে যায় কিন্তু টেরই পায় না। আগের দিনে দেখেছি চোর পালাতে পারে না। আর এখন চোরের সরদার যারা, তারা পালিয়ে যায়। যারা লুটপাট করেছে, তাদের কাউকে ধরার মতো বাস্তব কাজ সরকার করতে পারেনি।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে টিসিবির ট্রাক সেল বন্ধ, ৪৩ লাখ পরিবারের কার্ড বাতিল এবং শতাধিক পণ্যে শুল্ককর বাড়ানোর সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন। এ মানববন্ধনের আয়োজন করে নাগরিক ঐক্য।
মাহমুদুর রহমান বলেন, আমরা সংস্কারের কথা বলেছি এবং আমরা সংস্কার চাই। এ সরকার (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) সংস্কারের কথা বলেছেন। একটা অনির্বাচিত সরকার, বিশেষ একটা পরিস্থিতিতে গড়ে তোলা সরকার, একটা সরকার থেকে আরেকটা সরকার বানাতে যে সময় লাগে, সেই মধ্যবর্তী সময়ের জন্য তারা সরকার। এসময়ের মধ্যে যতখানি যা করা দরকার, তারা সেটা করবেন। কিন্তু তারা গরিব মানুষের কল্যাণে আজ পর্যন্ত একটা কাজও করেননি।
ড. ইউনূসকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আইএমএফ বাংলাদেশকে ৬৪০ কোটি ডলার বা ৬৭০ কোটি ডলার দেবে। টাকা দেওয়ার বদলে তারা ১০০টা দ্রব্যের ওপর ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়াতে বলেছে। আপনি ভালো লোক। আপনি আরও ভালো থাকেন। আমরা আপনাকে তো অসম্মান করছি না। কিন্তু আমার পেটে যদি ক্ষুধায় আগুন জ্বলে তাহলে আমি বলব, আপনি এসব ট্যাক্স কেন তুলে দিয়েছেন। কাজের কাজ এখনো কি করতে পেরেছেন? ব্যাংকগুলো সব ঠিকমতো চলে? যেরকম চেক দেয়, সেরকম টাকা দিতে পারে? এখন পর্যন্ত ব্যাংকগুলো তার নিয়ম অনুযায়ী চলে? সবগুলো ব্যাংকে যথাযথ তারল্য আছে? আমরা সেজন্য ড. ইউনূসকে কাঠগড়ায় তুলছি না। অন্তর্বর্তী সরকারকে কাঠগড়ায় তুলছি না। কিন্তু আমরা যে শুনলাম ড. ইউনূস এলে দেশের চেহারা বদলে যাবে, সারা দুনিয়ায় তার এত বন্ধুবান্ধব, এত ভক্ত; ওরা সবাই টাকা দেবে আর আমাদের সংকট কেটে যাবে। এরকমভাবে এখনো পর্যন্ত বিদেশ থেকে আমাদেরকে তো কোনো টাকা পয়সা দেয়নি।
ইউনূসকে উদ্দেশ করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি আরও বলেন, আপনি সেদিন বললেন আমাদের প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে আসছে। কিন্তু আমরা সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে দেখছি না। আপনি নতুন কোনো বন্ধু বানাতে পেরেছেন, তাও দেখছি না। পৃথিবীর বুকে ড. ইউনূসের নাম অনেক বেশি। কিন্তু বাংলাদেশের নাম অনেক বেড়েছে তা তো দেখছি না।
মাহমুদুর রহমান বলেন, এ জাতিকে আপনি (ড. ইউনূস) সংঘটিত করে যদি সামনের দিকে, উন্নতির দিকে এগিয়ে নিতে না পারেন, তাহলে এরপর কেউ এটা পারবে না। আইএমএফের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী যদি দেশ চালানোর কথা ভাবেন, তাহলে আপনার সঙ্গে আমাদের আরও লড়াই বাঁধবে। যদি বিশ্ব ব্যাংকের পরামর্শ মতো এমন সিদ্ধান্ত হয়, যা জনগণের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে, আমরা সেটা সাপোর্ট করব না। আমরা সেটা মানব না। মানুষের পেটে যদি ক্ষুধার আগুন থাকে, তাহলে তারা সংস্কারের কথা শুনবে না।
তিনি বলেন, আমার দল ক্ষমতায় যাবে না। কিন্তু তারপরও ভোট চাই। গণতন্ত্রের জন্য ভোট চাই। বিএনপি বড় দল, ওদের ক্ষমতার চাওয়া থাকতেই পারে। চাইবেই তো। তারা তো কষ্ট স্বীকার করেছে। বিএনপি যদি রোডম্যাপের কথা বলে, তাহলে রোডম্যাপ দেবেন। ড. ইউনূস জাতির উদ্দেশে যে ভাষণ দিয়েছেন, সেটাকে যদি পরিপূর্ণ রোডম্যাপ নাও বলা হয় কিন্তু একটা পথনির্দেশিকা বলতে পারবেন। ড. ইউনূস বলেছেন, হয় ডিসেম্বর না হলে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। এ কথা যেন ঠিক থাকে। আপনি (ড. ইউনূস) সব হিসাবনিকাশ করে বলেছেন। জনদুর্ভোগ বাড়ানোর কোনো পদক্ষেপ আর গ্রহণ করবেন না।
গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, ড. ইউনূস এখন দেশ গঠনের দায়িত্ব নিয়েছেন। কিন্তু উনি একা পারবেন না। দেশ গঠন করার দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোকে নিতে হবে। যখন ভোট হবে, যে দল ক্ষমতায় যাবে তাদেরকেই তো; যেটুকু কাজ ড. ইউনূস করতে পারবেন না, সে কাজগুলো তাদেরকে করতে হবে। সেই দলগুলো যদি অন্যান্য ধান্দায় লেগে যায়, তাহলে তো ভালো কোনো কাজই হবে না। ভালো দল, যারা জনগণের পক্ষে থেকে ভোট পেয়ে সরকার গঠন করতে পারবে, তারা দেশ বদলাতে পারবে। আর যে দল আগে বদলানোর কর্মসূচি দিতে না পারবে, সে দলের ওপর মানুষের ভরসা হবে না, তারা এখন কথা ভালো বলছে কিন্তু ক্ষমতায় গেলে মানবে না। সে সমস্ত দলকে আপনারা (সাধারণ মানুষ) ভোট দেবেন না।
গণতন্ত্র মঞ্চের এ শীর্ষ নেতা বলেন, সরকার ১৫টা কমিশন গঠন করেছে। এখন পর্যন্ত কোনো কমিশন রিপোর্ট দেয়নি। কথা ছিল ডিসেম্বর মাসে দেবে। কিন্তু তারা বলেছে জানুয়ারিতে দেবে। জানুয়ারিরও অর্ধেক চলে যাচ্ছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো রিপোর্ট দেয়নি।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)