রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ৫ মাঘ ১৪৩১


বায়ুদূষণের প্রভাবে দেশে বছরে এক লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত:১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ১৮:০৪

ছবি সংগৃহীত

ছবি সংগৃহীত

বায়ুদূষণের প্রভাবে (বার্ষিক গড় পিএম ২.৫) প্রতিবছর বাংলাদেশে ৫ হাজার ২৫৮ শিশুসহ ১ লাখ ২ হাজার ৪৫৬ জন মানুষের অকাল মৃত্যু হচ্ছে। এছাড়া বায়ুদূষণের কারণে হার্ট ডিজিস, স্ট্রোক, হাঁপানি-শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ও ফুসফুস ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।

শনিবার (১৮ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত 'বাংলাদেশে সূক্ষ্মকণা বায়ু দূষণে জনস্বাস্থ্য প্রভাব' শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশিত এক গবেষণায় এ তথ্য জানা যায়। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে সেন্টার ফর অ্যাটমসফেরিক এয়ার পলিউশন (ক্যাপস) ও সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার (সিআরইএ)।

সিআরইএ-এর গবেষণায় বলা হয়, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ দূষিত দেশের তালিকায় স্থান পায়। যেখানে প্রতি ঘনমিটার বাতাসে অতি ক্ষুদ্র বালু কণার বার্ষিক মান (পিএম ২.৫) ৭৯.৯ মাইক্রোগ্রাম। যা বার্ষিক জাতীয় মানদণ্ড ৩৫ মাইক্রোগ্রামের দ্বিগুণের বেশি। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানদণ্ড ৫ মাইক্রোগ্রামের ১৫ গুণ বেশি। বায়ুর এমন চরম দূষণ জনস্বাস্থ্যের ওপর অনিবার্য পরিণতি ডেকে আনছে। বিভিন্ন বয়সীরা নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি ৫ বছর কম বয়সী শিশুদের ওপর সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে।

বায়ুদূষণের প্রভাবে উদ্বেগজনক স্বাস্থ্য সংকটের মধ্যে, ২০২২ সালে সরকার প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ধূলি কণার মান ১৫ মাইক্রোগ্রাম থেকে বাড়িয়ে ৩৫ মাইক্রোগ্রাম নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেয়। যা গুরুতর উদ্বেগ সৃষ্টির পাশাপাশি বায়ুর মান অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করেছে।

সিআরইসিএ-এর বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশের জাতীয় বায়ুমানের মানদণ্ড (৩৫ মাইক্রোগ্রাম প্রতি ঘনমিটার) পূরণ করা সম্ভব হলে তা বড় প্রভাব ফেলতে পারে। এতে মৃত্যুহার ১৯ শতাংশ হ্রাস, আয়ুষ্কালজনিত সমস্যা (ওয়াইএলএল) ২১ শতাংশ এবং অক্ষমতার সঙ্গে বসবাস করা বছর (ওয়াইএলডি) ১২ শতাংশ হ্রাস করতে পারে।

এছাড়া ডব্লিউএইচও-এর ২০২১ সালের কঠোর নির্দেশিকা বায়ুর মান প্রতি ঘনমিটারে ৫ মাইক্রোগ্রাম অর্জন করা সম্ভব হলে মৃত্যুহার ৭৯ শতাংশ হ্রাস পাবে। যা প্রতি বছর ৮১ হাজার ২৮২ মানুষের জীবন রক্ষা করবে। সেই সঙ্গে হাঁপানি-শ্বাসকষ্ট প্রায় সব জরুরি চিকিৎসক ভিজিট, অকাল প্রসব এবং বার্ষিক ২৬৩ মিলিয়ন অসুস্থতাজনিত ছুটি এড়ানো যাবে।

সংবাদ সম্মেলনে সিআরইএ-এর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিশ্লেষক এবং প্রধান লেখক ড্যানিয়েল নেসান বলেন, সিআরইএ-এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, বিভিন্ন বায়ুমানের মানদণ্ড, বাংলাদেশের বর্তমান মান এবং ২০০৫ ও ২০২১ সালের ডব্লিউএইচও এর নির্দেশিকা তুলনা করে দেখা গেছে যে, পিএম ২.৫ স্তরে সামান্য উন্নতিও জাতীয় পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য সুবিধা এনে দিতে পারে। কঠোর নিয়ন্ত্রণ বাস্তবায়ন এবং পরিচ্ছন্ন জ্বালানি গ্রহণের মাধ্যমে বায়ুদূষণের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব।

সিআরইএ-এর বায়ুমান বিশ্লেষক ড. জেমি কেলি বলেন, বাংলাদেশের বায়ুদূষণের কারণে প্রতি বছর হাজার হাজার অপরিণত শিশু, কম ওজনের শিশুর জন্ম এবং শিশু মৃত্যু ঘটছে। এই পরিস্থিতি এমন হস্তক্ষেপের জরুরি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে, যা সবচেয়ে অরক্ষিতদের সুরক্ষা দিতে সক্ষম। পিএম২.৫ দূষণ প্রতি বছর প্রায় ২৬৬ মিলিয়ন কর্মদিবসের ক্ষতি সৃষ্টি করে, যা উৎপাদনশীলতার বড় ধরনের ক্ষতি করে ব্যবসা ও পরিবারের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে দুর্বল করে দেয়। বাংলাদেশের বায়ুদূষণ সমস্যার সমাধান জনস্বাস্থ্য এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে বিনিয়োগের সমতুল্য।

ক্যাপস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে এটি শুধু মানবদেহকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে না, বরং মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও বিরূপ প্রভাব ফেলছে। তাই, এ মুহূর্ত থেকেই দূষণ পর্যবেক্ষণ ও প্রতিরোধের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ এবং নীতিমালা গ্রহণ করা না হলে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বায়ুদূষণের কারণে গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখোমুখি হতে হবে।

সুইডিশ দূতাবাস বাংলাদেশ-এর ফার্স্ট সেক্রেটারি (পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন) মিসেস নায়োকা মার্টিনেজ ব্যাকস্ট্রম বলেন, বায়ুদূষণ ঢাকা এবং বাংলাদেশের প্রধান শহরগুলোর অন্যতম গুরুতর পরিবেশগত সমস্যা। এ সমস্যা মোকাবিলায় অগ্রাধিকারমূলক পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে পরিষ্কার উৎপাদন ব্যবস্থা, জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নীতিমালা ও প্রণোদনা তৈরি, কার্যকর গণপরিবহন এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিনিয়োগ। সুইডিশ সরকার অন্যান্য আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অংশীদারদের সাথে মিলে বিভিন্ন কর্মসূচি যেমন- সামাজিক নিরাপত্তা জাল, নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্প্রসারণসহ নানাক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে সহায়তা প্রদান করছে এবং বাংলাদেশে গুরুতর বায়ুদূষণ হ্রাসে আরও সহযোগিতার আশা করছে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও আইন অনুবিভাগ) তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, পিএম ২.৫ বাংলাদেশে নিঃসন্দেহ জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। বায়ুদূষণ কমাতে সরকার সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে কাজ করছে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স-এর প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়ন দর্শনে বড় ধরনের পরিবর্তন প্রয়োজন। নগর উন্নয়ন পরিকল্পনায় জনস্বাস্থ্যের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। এজন্য আইন সংস্কারসহ এর কঠোর প্রয়োগ অত্যন্ত জরুরি।

সংবাদ সম্মেলন আরও বক্তব্য রাখেন সেন্টার ফর ল' অ্যান্ড পলিসি অ্যাফেয়ার্সের সেক্রেটারি সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন, ২৫০ শয্যা টিবি হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক মাহবুবুল ইসলাম।

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)
আরো পড়ুন

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

নামাজের সময়সূচি

ওয়াক্ত সময়সূচি
ফজর ০৫:২৩ ভোর
যোহর ১২:০৯ দুপুর
আছর ০৩:৫৯ বিকেল
মাগরিব ০৫:৩৮ সন্ধ্যা
এশা ০৬:৫৪ রাত

রবিবার ১৯ জানুয়ারী ২০২৫