রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ৬ মাঘ ১৪৩১


স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

আমার নামে কেউ অনৈতিক সুবিধা চাইলে দেবেন না, পুলিশ ডেকে ধরিয়ে দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত:১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ১৫:১২

ছবি সংগৃহীত

ছবি সংগৃহীত

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, স্বরাষ্ট্রের পাশাপাশি কৃষি উপদেষ্টা হওয়ার পর আমার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু বান্ধবের সংখ্যা বেড়ে গেছে। পাশাপাশি রিকোয়েস্টের সংখ্যাও বেড়ে গেছে। অধিকাংশ অনুরোধ আসছে ভূমি সংক্রান্ত।

তিনি দুর্নীতি রোধে সচেতন ও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ভূমি কর্মকর্তা ও এসিল্যান্ডদের উদ্দেশে বলেন, আমার পরিচয় দিয়ে যদি কেউ কিছু করতে চায় বা অবৈধ সুবিধা নিতে চায়, আপনারা কেউ কোনো সময়েই তা দেবেন না। প্রথমে বোঝাবেন, না বুঝলে পুলিশে দেবেন।

রোববার (১৯ জানুয়ারি) দুপুরে বিসিএস ক্যাডারভুক্ত (প্রশাসন, পুলিশ, বন ও রেলওয়ে) এবং বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসের কর্মকর্তাদের ১৩৭তম সার্ভে ও সেটেলমেন্ট প্রশিক্ষণ কোর্স, ২০২৪-২৫ এর সনদপত্র বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।

ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. মো. মাহমুদ হাসানের সভাপতিত্বে রাজধানীর তেজগাঁও ভূমি ভবনের কেন্দ্রীয় সেমিনার কক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে পুলিশ বাহিনীর উদ্দেশে কৃষি উপদেষ্টা বলেন, ভূমি নিয়ে পুলিশের বিশেষ কাজ করার কিছু নেই। কিন্তু সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ভূমি সমস্যার কারণেই আসে।

তিনি বলেন, আমরাও (মন্ত্রণালয়) যদি কোনো সময় দুর্নীতি করি তাহলে সত্যটা প্রকাশ করুন, তাতে আমার কিছুতে আফসোস হবে না। সত্যটা প্রকাশ করুন, যেটা সঠিক। সাংবাদিকরা অনুসন্ধান করুন। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মাধ্যমে দুর্নীতি প্রকাশ করে দিন। তাতে আমরা লাভবান হব; দেশ ও জনগণ লাভবান হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যদি আমরা সোচ্চার না হই, তাহলে দেশ কিন্তু আরো আস্তে আস্তে পিছিয়ে পড়বে।

জমিজমার মামলা সম্পর্কে কৃষি উপদেষ্টা বলেন, জমিজমার মামলা কিন্তু অনেকদিন ধরে চলে। অনেক সময় হয় এমন যে, বাবার মামলা, ছেলেও সমাধান পায় না। পরে নাতি দেখা যায় জমিই চেনে না। এটা কিন্তু চেষ্টা করলে সমাধান সম্ভব, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সিভিল সার্ভিস দেশের উন্নয়ন, পরিকল্পনা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন, পরিবর্তনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। অন্যদিকে জবাবদিহিহীন সিভিল সার্ভিস ফ্যাসিস্ট শাসন সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে সিভিল সার্ভিসের আনুগত্য ও বিশ্বাসযোগ্যতার মানদণ্ড রাষ্ট্র ও জনগণের পরিবর্তে রাজনৈতিক আদর্শ ও ব্যক্তিত্বের কাছে আত্মসমর্পণ করে। ব্যক্তিগত সুবিধা, রাজনৈতিক মেরুকরণ ও দুর্নীতি প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি যেহেতু সরকারকে সিভিল সার্ভিসকে নিয়মতমাফিক বেতন ভাতা দিতে হয় ও চাকরি হারার তাদের ভয় থাকে না সেহেতু উদ্ভাবনী শক্তি ও জবাবদিহিতা ও সেবামূলক মনোভাব, দেশসেবার আগ্রহ থাকে না। ফলে সিভিল সার্ভিস তাদের মূল উদ্দেশ্য জনগণের সেবা কল্যাণের অনীহা, দীর্ঘসূত্রতা ও লালফিতার দৌরাত্ম্য অবলম্বন করে। সেবা প্রাপ্তি ও সার্ভিস প্রদানের মূল উদ্দেশ্য থেকে তারা দূরে সরে যায়। অধিকতর দুর্ভাগ্যজনক যে, যারা সিভিল সার্ভিসের যুক্ত হয়, সেবা বা সার্ভিস না দিয়ে রাজনৈতিক সুযোগে ব্যক্তি স্বার্থে অন্যতম মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে।

বিশ্বের উন্নত দেশের উদাহরণ টেনে উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তন বা সরকার ব্যবস্থার বিবর্তনেও উন্নত দেশগুলোতে আমরা সিভিল সার্ভিসে পরিবর্তন দেখি না। কিন্তু আমাদের দেশে দেখা যায়। প্রজ্ঞা, মেধা, দক্ষতা, স্বচ্ছতা, ন্যায়নিষ্ঠতা, জবাবদিহিতা, সমতা, দেশপ্রেমের প্রতি দায়বদ্ধতার জন্য আমার মনে হয়, আরো অনেক পথ অতিক্রম করতে হবে সিভিল সার্ভিসকে।

তিনি বাংলাদেশের সিভিল সার্ভিসের জন্য অ্যাটিচিউড, সার্ভিস ডিসিপ্লিন পলিটিক্যাল নিরপেক্ষতা, সমতা, পারফরম্যান্স, কেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, পাবলিক ডিউটি ইফিসিয়েন্সি, ট্রেনিং, ইভালুয়েশন সিস্টেম, ট্রান্সপারেন্ট, অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ম্যানেজমেন্ট ক্যাপাসিটি গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে বলেন, শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতা থাকলে আন্তঃক্যাডার দ্বন্দ্ব থাকতো না। সবাই সচিব হতে চাইতো না। রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি তৈরি হতো না। তোষণ নীতি থাকত না।

প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অনুজ কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কৃষি উপদেষ্টা বলেন, কৃষকদের কীভাবে সর্বোচ্চ সহায়তা করা যায়, সেজন্য সবাইকে সদা তৎপর ও আন্তরিক হওয়া দরকার। ভূমি মালিকদের একটি করে ল্যান্ড সার্টিফিকেট থাকা দরকার। ভূমি মালিকানা নিয়ে দেওয়ানি আদালতে যুগ যুগ ধরে হাজার হাজার জমে থাকা মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা দরকার। সেবা আরো সহজ করা প্রয়োজন, রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া আরো জনবান্ধব হওয়া উচিত। সুশাসন নিশ্চিতে ভূমি ব্যবস্থার সঙ্গে সব মাঠ প্রশাসনের গণকর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সিভিল মামলার দায়িত্বে নিয়োজিত বিচারকদের ভূমি ব্যবস্থাপনা ও ভূমি প্রশাসন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকা প্রয়োজন।

ভবিষ্যতে ভূমি সেবা নিশ্চিত হবে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে, জন-হয়রানি হ্রাস পাবে, মামলার জটিলতা কমবে, সেবা গ্রহীতারা আশা জাগ্রত হবে। যদি নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে ভূমি সেবা সহজ করতে একটি করে ল্যান্ড সার্ভিস টেকনিক প্রতিষ্ঠা করা যায়, সেই আশাবাদ ব্যক্ত করেন কৃষি উপদেষ্টা।

উপস্থিত কর্মকর্তাদের শপথ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে কৃষি উপদেষ্টা বলেন, আপনাদের মাধ্যমে ভূমি ব্যবস্থাপনায় নতুন কোনো জটিলতা তৈরি হবে না, মামলার জট তৈরি হবে না, মামলা দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হবে না, ভূমি বিরোধ বাড়বে না, ক্ষমতার অপব্যবহার হবে না, বেআইনিভাবে আত্মসাৎ করবে না, দুর্নীতি করবে না।

লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর বলেন, এদেশে বড় সমস্যা হচ্ছে দুর্নীতি। এই সমস্যায় বড় ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ জনগণ। অনেক সময়ই তারা সঠিক সহায়তাটা পান না। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে মাঠ পর্যায়ে দুর্নীতি কমিয়ে আনতে হবে। চেষ্টা করলে সম্ভব। এসিল্যান্ড হিসেবে আপনারা অনেকে কাজ করেছেন, অনেকে সেখানে যাবেন। আপনারাই পারবেন সাধারণ মানুষকে সহায়তা করতে। অনেক সময় নষ্ট হয় পকেট থেকে অনেক পয়সা খরচ হয়, কিন্তু সেবাটা সাধারণ মানুষ পান না। সে জায়গায় আপনারা সাধারণ মানুষকে সহযোগিতা করতে পারেন অনেক বেশি।

বন বিভাগের অব্যবস্থাপনার কথা উল্লেখ করে কৃষি উপদেষ্টা বলেন, আমি হিলট্রেকে কাজ করেছি তিন বছর। দেখছি সেখানে গাছ লাগানোই হয় না, কিন্তু পরিষ্কার বা কাঁটার জন্য পয়সা আগে চলে আসে। এদিকে খেয়াল করতে হবে। এখানে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। তাতে সাধারণ মানুষ ও পাহাড় জনগোষ্ঠীর খুব উপকৃত হবে। তেমনিভাবে রেলের অনেক জমি রয়েছে অনেক সময় লিজ দিয়ে দেওয়া হয়। কী পরিমাণ জমি আছে? তা সব কি হাতে আছে? চেয়ারের মধ্যে সবসময় নিজেকে সীমাবদ্ধ না রেখে বাইরে বা মাঠ পর্যায়ে কাজ করা আনন্দটা একটু গ্রহণ করুন। তাতে জনগণ উপকৃত হবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এস এম সালেহ আহমেদ, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান (সচিব) এ. জে. এম. সালাহউদ্দিন নাগরী, ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান (সচিব) মুহম্মদ ইব্রাহিম।

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)
আরো পড়ুন

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

নামাজের সময়সূচি

ওয়াক্ত সময়সূচি
ফজর ০৫:২৩ ভোর
যোহর ১২:১০ দুপুর
আছর ০৪:০০ বিকেল
মাগরিব ০৫:৩৯ সন্ধ্যা
এশা ০৬:৫৫ রাত

রবিবার ১৯ জানুয়ারী ২০২৫