মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২ মাঘ ১৪৩১
জুলাই আন্দোলনে গণহত্যাকারীদের গ্রেপ্তার এবং বিচারের দাবিতে আগামীকাল বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) ৬৪ জেলায় এই কর্মসূচি পালন করবে গণঅধিকার পরিষদ। বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে গণহত্যাকারীদের গ্রেপ্তার এবং বিচারের দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি জমা দেবে তারা।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) পুরানা পল্টনের আলরাজি কমপ্লেক্সে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলটির সভাপতি নুরুল হক নুর এ ঘোষণা দেন।
দলের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন।
তিনি বলেন, ছাত্র-জনতা-নাগরিক অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ২০২৪ ইং তারিখে ফ্যাসিবাদের জননী শেখ হাসিনা তার প্রভু রাষ্ট্র ভারতে পালিয়ে গিয়ে অবৈধভাবে বসবাস করছে এবং ষড়যন্ত্রমূলক অডিও রেকর্ড প্রকাশের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করতে একের পর এক উসকানি প্রদান করছে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দিয়ে ইতোমধ্যে গণহত্যাকারী দল আ.লীগের নেতাকর্মীরা সারা দেশে গুপ্ত হামলা, ঝটিকা মিছিল ও গণসংযোগ শুরু করেছে। গত রোববার (২ ফেব্রুয়ারি)জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে গণহত্যাকারী আওয়ামী দুর্বৃত্তরা পুলিশের গাড়ি থেকে পাবনার সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল ওহাবকে ছিনিয়ে নেয়। এছাড়াও ছাত্র-জনতা-নাগরিক অভ্যুত্থানের সরকারকে উৎখাত করতে দেশব্যাপী নাশকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সারা দেশে তারা হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করে।
রাশেদ খাঁন বলেন, গত ৮ আগস্ট ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণহত্যাকারী আওয়ামী দুর্বৃত্তদের গ্রেফতার ও বিচারের বিষয়ে যতোটা কঠোর হওয়া দরকার ছিল, উলটো বিপরীত চিত্র পরিলক্ষিত হয়েছে। সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী এ পর্যন্ত গণহত্যাকারী দল আওয়ামী লীগের ৫৭২ জন নেতা ও তার দোসরদের জামিনে হয়েছে। গণহত্যার মামলার আসামিরা কিভাবে জামিন পাচ্ছে, আমরা সরকারের কাছে সেটির স্পষ্ট ব্যাখ্যা জানতে চাই। এছাড়া জুলাই -আগস্টে ছাত্র-জনতা-নাগরিকদের গণঅভ্যুত্থানে বর্বরোচিত হামলা ও হত্যাযজ্ঞ চালানো অপরাধীদের কতজন গ্রেপ্তার হয়েছে সরকারের কাছে সেটি জানতে চাই।
তিনি বলেন, সহস্রাধিক মানুষ হত্যা , হাজার হাজার পঙ্গু ও আহত হওয়ার এই বর্বরোচিত ঘটনা ও ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যার সঠিক বিচার না হলে ভবিষ্যতেও এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা থাকে। আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই গণহত্যার বিচার হতে হবে। কিন্তু আসামিদের গ্রেপ্তার, জেলে ও দেশের বাইরে রেখে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভবপর নয়। তাই ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের অংশীজন হিসেবে জনগণের পক্ষ থেকে আগামীকাল ৫ ফেব্রুয়ারি ‘জুলাই’ গণহত্যায় জড়িত গণহত্যাকারীসহ বিগত ফ্যাসিস্ট রেজিমে দেশের সম্পদ লুটপাট ও দেশের অর্থ বিদেশে পাচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তার ও দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচার নিষ্পত্তির দাবিতে ৬৪ জেলায় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
এ সময় তারা ৫টি দাবি জানান। সেগুলো হলো :
১. জুলাই গণঅভ্যুত্থানসহ গত ১৬ বছরের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আহত, ক্ষতিগ্রস্ত ও শহীদদের সঠিক তালিকা তৈরি,ক্ষতিপূরণ এবং যথাযথ চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।
২. বিদেশে পলাতক গণহত্যার মাস্টারমাইন্ড শেখ হাসিনাসহ সবাইকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার এবং গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা।
৩. ফ্যাসিবাদের আমলে উন্নয়নের নামে লুটপাট, অর্থ পাচারের জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার নিশ্চিত করা।
৪. গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষায় রাষ্ট্র সংস্কার ও আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে জাতীয় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে কার্যকর সংস্কার নিশ্চিতে অভ্যুত্থানের অংশীজনদের নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন ও নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা।
৫. বিগত ১৬ বছরে ফ্যাসিস্ট হাসিনার রেজিমের গুম-খুন ও ১৪, ১৮ এবং ২৪ সালের ভুয়া নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্তদের আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন-সিনিয়র সহসভাপতি ফারুক হাসান, উচ্চতর পরিষদ সদস্য নূরে এরশাদ সিদ্দিকী, আরিফ তালুকদার, ফাতেমা তাসনীম, প্রচার সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক ইলিয়াস মিয়া প্রমুখ।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)