শনিবার, ৫ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২
ছবি সংগৃহীত
বাংলাদেশের সঙ্গে বিনিয়োগ, মৎস্য, রোহিঙ্গা মানবিক সহায়তা এবং তরুণদের উন্নয়ন— বিশেষ করে শিক্ষা ও ক্রীড়াসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা আরও জোরদার করতে জাপানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) এক্সিকিউটিভ সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মিয়াজাকি কাতসুরার সঙ্গে বৈঠককালে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, জাপান সব সময় বাংলাদেশের একজন নির্ভরযোগ্য বন্ধু। সম্প্রতি আমি জাপান সফর করেছি এবং আমি ও আমার প্রতিনিধিদল যে আন্তরিকতা ও আতিথেয়তা পেয়েছি, তাতে আমরা গভীরভাবে আবেগাপ্লুত। বাংলাদেশ সব সময় জাপানের বন্ধুত্ব ও অবদান স্মরণে রাখবে।
এসময় মিয়াজাকি কাতসুরা বলেন, বাংলাদেশ এশিয়ায় জাপানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। আমরা বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রায় পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি। আমরা ‘জুলাই অভ্যুত্থানে’ নিহত ও আহতদের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করছি।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা মাতারবাড়ি প্রকল্পের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, এটি আমাদের দেশের ভবিষ্যতের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। দেশের সামুদ্রিক সম্ভাবনার ওপর জোর দিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, জাইকা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতে আমি বলেছিলাম, আমরা একটি সমুদ্রভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তুলতে চাই।
বাংলাদেশি তরুণদের জন্য জাপানে পড়াশোনা ও কাজের সুযোগ বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অনেক তরুণ জাপানে কাজ করতে আগ্রহী। সমস্যা হলো ভাষা। আমরা প্রস্তাব দিয়েছি, জাপানি শিক্ষকরা বাংলাদেশে আসবেন বা অনলাইনে পাঠ দেবেন যাতে আমাদের মানুষ জাপানি ভাষা ও কর্মসংস্থানের আদবকায়দা শিখতে পারে।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুর্দশা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক পরিস্থিতি। হাজার হাজার তরুণ ক্যাম্পে বেড়ে উঠছে কোনো আশাবাদ ছাড়া। তারা হতাশ হচ্ছে, ক্ষুব্ধ হচ্ছে।
মিয়াজাকি জানান, এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে জাইকা বিচার বিভাগ, সরকারি প্রশাসন, স্থানীয় সরকার ও স্বাস্থ্য খাতে সংস্কারে সহায়তা দিচ্ছে।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশের জন্য একটি বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, যার মাধ্যমে জাপান ও বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার, প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সহযোগিতায় উন্নতমানের আইসিটি মানবসম্পদ গড়ে তোলা হবে।
তরুণদের উন্নয়ন প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নারী ক্রীড়ায় বাংলাদেশ চমৎকার ফল করছে। আমাদের মেয়েরা সবখানে জিতছে। গতকালও তারা জিতে ফাইনালে উঠেছে। আমরা হোস্টেল সুবিধা বাড়াচ্ছি, তবে তাদের স্বাস্থ্য ও প্রশিক্ষণের জন্য আরও সহায়তা প্রয়োজন।
জবাবে মিয়াজাকি বলেন, জাপান অনেক দেশে শিক্ষাবিষয়ক প্রকল্পে স্বেচ্ছাসেবক পাঠাচ্ছে। আমরা নারী ক্রীড়াতেও আরও সহযোগিতা বিবেচনায় রাখব।
বৈঠকে সম্প্রতি বাংলাদেশে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ ও অনুদান চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য জাপানকে ধন্যবাদ জানান অধ্যাপক ইউনূস। এসব অর্থ অর্থনৈতিক সংস্কার, রেলওয়ে নির্মাণ এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে ব্যবহৃত হবে। তিনি বার্ষিক জাপানি উন্নয়ন সহযোগিতার (ODA) সীমা ৩০০ বিলিয়ন ইয়েন থেকে বাড়িয়ে ৪৫০ বিলিয়ন ইয়েনে উন্নীত করার অনুরোধ জানান, যাতে আরও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায়।
ডিএস /সীমা
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)