মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট ২০২৫, ৪ ভাদ্র ১৪৩২
ছবি সংগৃহীত
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রক্রিয়ায় তামাক কোম্পানির মতামত নিচ্ছে সরকার। এ সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকরা। তাদের মতে, এটি আন্তর্জাতিক তামাক নিয়ন্ত্রণ সনদের ৫.৩ ধারার সরাসরি লঙ্ঘন এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। অবিলম্বে এ ধরনের বৈঠক বাতিল করে প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত অনুমোদনের দাবি জানান তারা।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) ঢাকায় ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক সেমিনারে তারা এ দাবি জানান।
চিকিৎসকরা জানান, দেশে প্রতিবছর এক লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ তামাকজনিত রোগে প্রাণ হারাচ্ছেন। প্রতিদিন আরও তিন কোটির বেশি প্রাপ্তবয়স্ক পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন। এ অবস্থায় বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাস খুবই জরুরি হয়ে দাড়িয়েছে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী। তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর এক লাখ ৬১ হাজার মানুষ তামাকজনিত রোগে মারা যায় এবং প্রায় চার লাখ মানুষ পঙ্গুত্বের শিকার হন। একইসঙ্গে প্রতিদিন প্রায় তিন কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। তাই আইন সংশোধনে বিলম্ব মানে জনস্বাস্থ্যের প্রতি অবহেলা করা।
তিনি আরও বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকার স্টেকহোল্ডার মিটিংয়ের নামে তামাক কোম্পানির মতামত গ্রহণ করছে, যা আন্তর্জাতিক তামাক নিয়ন্ত্রণ সনদের ৫.৩ ধারার প্রকাশ্য লঙ্ঘন। এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। তাই সরকার যেন দ্রুত এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত সংশোধনী অনুমোদন করে।
সভাপতির বক্তব্যে গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক ক্যান্সার হাসপাতাল ও গবেষণা কেন্দ্রের প্রকল্প সমন্বয়কারী অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, প্রতিদিন গড়ে ৪৪২ জন মানুষ তামাকজনিত কারণে অকালে মারা যাচ্ছেন। এই প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু রোধে আইন সংশোধনে বিলম্ব অগ্রহণযোগ্য এবং এর দায় সরকারকেই নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক তামাক নিয়ন্ত্রণ সনদের প্রথম স্বাক্ষরকারী দেশ হয়েও এখন তামাক কোম্পানির মতামত গ্রহণ করছে, যা জনস্বার্থবিরোধী। তামাক কোম্পানির একমাত্র লক্ষ্য মুনাফা, জনস্বাস্থ্য নয়। তাই এদের মতামত গ্রহণ করা মানেই জনস্বার্থকে উপেক্ষা করা।
অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ আরও বলেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আজীবন তামাকের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। আশির দশকে তিনি এমনকি ঘোষণা দিয়েছিলেন, ধূমপায়ীদের চাকরির জন্য আবেদন করার প্রয়োজন নেই। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ভবিষ্যতেও তামাক নিয়ন্ত্রণে নিরলসভাবে কাজ করবে বলেও জানান তিনি।
সেমিনারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী বাস্তবায়নের ওপর জোর দেওয়া হয়। এগুলো হলো— শতভাগ পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহন ধূমপানমুক্ত করা, তামাক বিক্রয়স্থলে প্রদর্শনী নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির সিএসআর কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেটসহ নতুন তামাকজাত দ্রব্য থেকে তরুণদের রক্ষা করা, স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা এবং খোলা তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা।
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন- গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজের অনকোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. খোরশেদ আলম, গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সাঈদ-উজ-জামান, অধ্যাপক ডা. মুজিবুল হক, অধ্যাপক আকরাম হোসেন, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের সমন্বয়ক ডা. অরুনা সরকার, সিনিয়র কমিউনিকেশনস অফিসার আবু জাফরসহ বিভিন্ন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।
ডিএস /সীমা
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)