মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২
ফাইল ছবি
ব্যাটারিচালিত রিকশা নিবন্ধন হলে সড়ক দুর্ঘটনা দ্বিগুণ বাড়বে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) গণমাধ্যমে পাঠানো সেপ্টেম্বর মাসের দুর্ঘটনা প্রতিবেদনে তিনি এ মন্তব্য করেন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণ করে দুর্ঘটনার তথ্য প্রকাশ করেছে।
দুর্ঘটনা প্রতিবেদনে বলা হয়, সেপ্টেম্বরে সারাদেশে ৫০৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫০২ জন নিহত ও ৯৬৪ জন আহত হয়েছেন। রেলপথে ৫০টি দুর্ঘটনায় ৪৬ জন নিহত ও ৩ জন আহত হয়েছেন। নৌপথে ১৩টি দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত, ১৫ জন আহত এবং ৩ জন নিখোঁজ রয়েছেন। সড়ক, রেল ও নৌপথে সর্বমোট ৫৬৭টি দুর্ঘটনায় ৫৬৫ জন নিহত এবং ৯৮২ জন আহত হয়েছেন।
এই সময়ে ১৯১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৯৯ জন নিহত ও ১৮৮ জন আহত হয়েছেন। যা মোট দুর্ঘটনার ৩৭.৮৯ শতাংশ, নিহতের ৩৯.৬৪ শতাংশ ও আহতের ১৯.৫০ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে—১২৬টি দুর্ঘটনায় ১২২ জন নিহত ও ২১৬ জন আহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে বরিশাল বিভাগে—২২টি দুর্ঘটনায় ২৭ জন নিহত ও ৪৭ জন আহত হয়েছেন।
সড়ক দুর্ঘটনায় জড়িত ৭৭২টি যানবাহনের মধ্যে দেখা যায়, ২৯.০১ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২২.০২ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ১৬.৫৮ শতাংশ বাস, ১২.১৭ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৭.৩৮ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ৭.২৫ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা এবং ৫.৫৬ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে।
মোট দুর্ঘটনার মধ্যে ৪৮.৮০ শতাংশ গাড়ি চাপায়, ২৮.৫৭ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষে, ১৭.৮৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ৩.৭৬ শতাংশ বিভিন্ন কারণে, ০.৩৯ শতাংশ চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে এবং ০.৫৯ শতাংশ ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষে ঘটেছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসে দুর্ঘটনার প্রধান কারণ ছিল—বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের গর্ত, সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকশা, সিএনজি অটোরিকশা ও নসিমন-করিমনের অবাধ চলাচল; রোড সাইন ও সড়কবাতির অভাব; মিডিয়ান না থাকা; মহাসড়কে গাছপালায় অন্ধ বাঁক সৃষ্টি; নির্মাণ ও যানবাহনের ত্রুটি; ট্রাফিক আইন অমান্য; উল্টোপথে চলাচল; চাঁদাবাজি; পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহন; অদক্ষ চালক; ফিটনেসবিহীন যান; অতিরিক্ত যাত্রীবহন; বেপরোয়া ও বিরামহীনভাবে যানবাহন চালানো।
দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সুপারিশ হিসেবে বলা হয়েছে— বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক-মহাসড়ক জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করা; রাতের বেলায় আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা; দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ ও যানবাহনের ডিজিটাল ফিটনেস প্রদান; গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে সার্ভিস লেন ও ফুটপাত তৈরি; সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করা; চালকের বেতন ও কর্মঘণ্টা নিশ্চিত করা; রোড সাইন ও রোড মার্কিং স্থাপন; আধুনিক প্রযুক্তিতে সড়ক পরিবহন আইন প্রয়োগ; সারাদেশে আধুনিক বাস নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা; নিয়ন্ত্রক সংস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি; নিয়মিত রোড সেফটি অডিট করা; ফিটনেসবিহীন যান স্ক্র্যাপ করা এবং মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত রিকশার আমদানি ও নিবন্ধন নিয়ন্ত্রণ করা।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)