শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের অবরোধ কর্মসূচি ‘বাংলা ব্লকেডে’র কারণে গতকাল স্থবির হয়ে পড়ে রাজধানী শহর। এছাড়া দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার (৮ জুলাই) শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচি চলবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
গতকাল রোববারের বাংলা ব্লকেডে কার্যত অচল হয়ে পড়ে ঢাকার বড় অংশ। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে শাহবাগ থেকে আন্দোলনকারীরা ঘোষণা দেন, দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অনির্দিষ্টকালের জন্য তারা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ছাত্র ধর্মঘট কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন।
আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়কারী নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকের পর আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। সরকারি চাকরিতে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সব ধরনের বৈষম্যমূলক ও অযৌক্তিক কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকব।’
চলমান আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভকারীরা ঢাকাসহ অন্যান্য শহরের প্রধান মহাসড়ক অবরোধ করেছে। ঢাকার সায়েন্সল্যাব, নীলক্ষেত, নিউমার্কেট, বকশীবাজার, শাহবাগ, পরিবাগ, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
দুপুর আড়াইটা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত অবরোধ চলাকালে ঢাকার যান চলাচল অচল হয়ে পড়ে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন আন্দোলনকারীরা।
কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দফা দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা সোয়া চার ঘণ্টা পর রাজধানীর শাহবাগ মোড় ছাড়েন। রাত আটটার দিকে অবরোধ তুলে নেন তারা। তখন যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। প্রতিটি অবরোধের স্থানেই পুলিশের বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন ছিল।
শাহবাগ মোড়ের অবরোধ তুলে নেওয়ার আগে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ। সন্ধ্যার দিকে এই তিন নেতাসহ আরেক নেতা আসিফ মাহমুদকে পুলিশ ডেকে নিয়ে কথা বলে। ফিরে এসে তারা সাংবাদিকদের বলেন, তারা কোনো আপসে যাবেন না।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন বিদ্যুৎগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নেমে কর্মসূচি পালন করেছেন। আমাদের আদালত দেখিয়ে লাভ নেই, আমরা আপনাদের সংবিধান দেখাচ্ছি। আমরা আশা করি, প্রধানমন্ত্রী এবারও শিক্ষার্থীদের মতের পক্ষে সংসদে দাঁড়িয়ে কোটার বিষয়ে চূড়ান্ত সুরাহা দেবেন।’
কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, কোটাব্যবস্থা নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে চাইলে আগের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করতে হবে। এই কমিশনের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে। অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য যৌক্তিক ও ন্যূনতম কোটা রাখা যেতে পারে। তবে কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধাতালিকা থেকে নিয়োগ দিয়ে শূন্য পদগুলো পূরণ করতে হবে। চাকরিতে একই কোটা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না। দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)