রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
যুক্তরাজ্যের গার্ডিয়ান পত্রিকা এবং বাংলাদেশের মানবজমিন পত্রিকায় গার্মেন্টস নারী শ্রমিকদের নিয়ে মিথ্যা, বানোয়াট ও অপমানজনক খবর প্রচার করার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে গার্মেন্টস শিল্পের সক্রিয় ৭টি শ্রমিক ফেডারেশন। পত্রিকা দুটিকে রাষ্ট্রীয় বিচারের আওতায় আনারও দাবি জানিয়েছে সংগঠনগুলো।
মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানানো হয়। মানববন্ধনের আয়োজন করা ৭টি শ্রমিক ফেডারেশন হচ্ছে— রেডিমেড গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল লেবার ফেডারেশন, মুক্ত গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশন, সম্মিলিত শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ গার্মেন্টস টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশি গার্মেন্টস ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন এবং জয় বাংলা জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন।
মানববন্ধনে রেডিমেড গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি লাভলী ইয়াসমিন বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত তৈরি পোশাক শিল্প। বিগত তিন দশকে এই খাতে উৎপাদন ব্যবসা দ্রুত প্রসারিত হয়েছে। বাংলাদেশ পোশাক শিল্প পৃথিবীর ২য় বৃহত্তম আন্তর্জাতিক পোশাক খাত, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের জিডিপিতে তৈরি পোশাক খাতের অবদান ছিল ১১ শতাংশ এবং বাংলাদেশ থেকে মোট রপ্তানিতে জিডিপিতে ৮৪ দশমিক ৫ শতাংশ অবদান রাখে, যা প্রায় ৪ হাজার ৭০০ কোটি ডলারেরও বেশি। তবে সম্প্রতি ব্রিটেনের সংবাদমাধ্যম দ্যা গার্ডিয়ানে বাংলাদেশি এক নারী পোশাক শ্রমিকের উদ্ধৃতি দিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতির কারণে জীবনযাপনের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় রাতে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন নারী পোশাক শ্রমিকরা। ওই প্রতিবেদনে এক নারী শ্রমিকের জীবনকাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট যা বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প ধ্বংসের লক্ষ্যে অপপ্রচার। আমরা ওই ভিত্তিহীন, বানোয়াট প্রতিবেদনকারী সংবাদ মাধ্যম দ্যা গার্ডিয়ান এবং দৈনিক মানবজমিন পত্রিকাকে রাষ্ট্রীয় বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।
মুক্ত গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রানী খাঁন বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে মোট শ্রমিক রয়েছেন প্রায় ৩৬ লাখ এর মধ্যে ৬৫ শতাংশই নারী শ্রমিক। এই সেক্টরের শ্রমিকরা রাত দিন কঠোর পরিশ্রম করে উৎপাদিত পণ্যের মান বৃদ্ধি করে দক্ষতা ও অধিক উৎপাদনশীলতা বজায় রেখে দেশ ও শিল্পের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। অথচ সেই নারী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে কিছু অসাধু সংবাদ মাধ্যম, সাংবাদিকগণ প্রতিনিয়ত মিথ্যাচার করে দেশে ও দেশের পোশাক শিল্পকে ধংস করা লক্ষ্যে বিভিন্নভাবে মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। আমরা আজকের এই মানববন্ধন কর্মসূচির মাধ্যমে ইউকেভিক্তিক সংবাদপত্র দ্যা গার্ডিয়ান ও বাংলাদেশি সংবাদপত্র মানবজমিনের বিরুদ্ধে প্রসাশনিক তদন্ত করে কঠিন শাস্তির দাবি জানাই।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল লেবার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মরিয়ম আক্তার বলেন, বর্তমান সরকারের শ্রমবান্ধব প্রধানমন্ত্রী মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে চলতি বছরের ৮ নভেম্বর শ্রমিকদের মাসিক ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা নির্ধারণ করেন। যা গত ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে। মজুরি বাস্তবায়নের এই সময়েই দ্যা গার্ডিয়ান এবং দৈনিক মানবজমিন গার্মেন্টস শ্রমিক ও নারী শ্রমিকদের নিয়ে বানোয়াট ও অপমানজনক সংবাদ প্রকাশ করে। আমরা ওই সংবাদের তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রত্যাখ্যান করছি। সেই সঙ্গে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার বিরুদ্ধে আইনানুগ শাস্তিযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি।
সম্মিলিত শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুল হাসান নয়ন বলেন, কিছু মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের দেশের পোশাক খাত এবং নারী শ্রমিকদের নামে গুজব ছড়িয়ে বিশ্বের দরবারে মেইড ইন বাংলাদেশের সুনাম প্রশ্নবিদ্ধ করছে। যে শ্রমিকদের শ্রমের ঘামে ঘোরে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা, যে নারী শ্রমিকদের বলা হয় গোল্ডেন গার্ল সেই নারী শ্রমিকদের হেয় প্রতিপন্ন করে যৌনকর্মী হিসেবে আখ্যায়িত করে নারী-নীতি, হাইকোর্টের নির্দেশনা ও আইএলও কনভেনশন-১৯০ লঙ্ঘন করেছে। অনতি বিলম্বে তারা বাংলাদেশের নারী শ্রমিকদের কাছে এবং রাষ্ট্রের কাছে জবাবদিহি না করলে তাদের বিরুদ্ধে কোনো জরিপ এবং তথ্য উপাত্ত ছাড়াই এমন নেতিবাচক সংবাদ প্রচার করার কারণে যৌন নির্যাতনকারী হিসেবে মানহানির মামলা করার অনুরোধ করছি। একই সঙ্গে দেশের সব শ্রমিক সংগঠনকে একযোগে দ্যা গার্ডিয়ান এবং দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি।
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশি গার্মেন্টস ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ আলম, বাংলাদেশ গার্মেন্টস টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ বাছিদ, সম্মিলিত শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি আখি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল লেবার ফেডারেশনের শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক ফারিয়া প্রমুখ।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)