শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
পেশায় পিকআপ ভ্যান চালক। শাকিল আহমেদ আগস্টের ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হন। মেরুদণ্ডে আটকে থাকা সেই বুলেট নিয়ে তিনি এখন জীবন-মৃত্যুর হিসাব করছেন।
শাকিল বলেন, আমরা গাজীপুরের মাওনা মোড়ে মিছিলে ছিলাম। হঠাৎ বিজিবি সেখানে গুলি চালায়। একটা গুলি আমার কোমরে লাগে। আমাকে এতটাই আঘাত করা হয়েছিল যে আমি মাটিতে পড়ে যাই। লোকজন আমার কাছ থেকে পালাতে শুরু করে। এত রক্ত বেরিয়েছে যে থামানো যাচ্ছিল না।
শাকিল সেদিন প্রাথমিক চিকিৎসা নেন গাজীপুরের স্থানীয় একটি হাসপাতালে। সেখানে এক্স রে রিপোর্টে ধরা পড়ে যে কোমরে মেরুদণ্ডের হাড়ে বুলেট আটকে আছে।
শাকিল বলেন, যখন দেখি যে বুলেট, আমি তো আতংকে পইড়া গেছি। মেরুদণ্ডের এমন জায়গায় বুলেটটা আটকায়া আছে, আমি মনে হয় আর বাঁচবো না। তখন সবার আগে আমার বাচ্চাটার কথা মনে পড়তেছিলো। আমার কিছু হলে বাচ্চাটা তো এতিম হয়ে যাবে।
শাকিল পরে চিকিৎসা নেন বিএসএমএমইউতে এবং পরে সিএমএইচ-এ। কিন্তু সবখানেই জানানো হয়, এই বুলেট ‘বের করা যাবে না’।
“মেরুদণ্ডে এমনভাবে আটকাইছে বুলেটটা যে এটা বের করতে গেলে আমি মারা যাইতে পারি। অথবা পেছনের অংশটা প্যারালাইসিস হয়ে যেতে পারে। সব হাসপাতাল এইটাই বলছে। যেভাবে আছে সেভাবেই রাখতে হবে আপাতত। আর এটার চিকিৎসা নিতে হলে দেশের বাইরে যেতে হবে। কিন্তু সেটা তো আমার পক্ষে সম্ভব না। আমার সেই সামর্থ্য নাই।”
আরও পড়ুন: গণভবন পরিদর্শনে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম
শরীরে বুলেট নিয়ে শাকিল ঠিক মতো হাঁটতে পারেন না। গাড়ি চালকের চাকরিও ছেড়েছেন।
বলছেন, শুধু নিজের জীবন নয়, বাবা-মা’সহ ৬ সদস্যের সংসারের ভবিষ্যতও এখন অনিশ্চিত।
“বুলেটটা তো বের করা যাচ্ছে না। বুলেট নিয়ে আমি কতদিন থাকবো? এটা তো বের করতে হবে। কারণ এটা তো একটা লোহা। এটা জং ধরতে পারে। গানপাউডার থাকতে পারে। সেখান থেকে ইনফেকশন হইতে পারে। আজকে না হলেও কিছুদিন পর তো সেটা হইতেই পারে।”
“আমি গাড়ি চালায় যে টাকা ইনকাম করি, সেটা দিয়েই আমার ছোট ভাইয়ের লেখা-পড়া, বাবা-মা এবং আমার নিজের সংসার চলে। এখন তো আমি প্রায় অচল। কাজ নাই, আয় নাই। আমার সংসারের কী হবে? আমি কি বাঁচতে পারবো?”
শাকিল আহমেদ আশা করছেন, তার উন্নত চিকিৎসার জন্য যেন সবাই এগিয়ে আসে।
সূত্র : বিবিসি বাংলা।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)