বৃহঃস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১


জুনে গণপরিষদ নির্বাচন ও বিপ্লবী সরকারের দাবিতে ১১ দফা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত:২৯ জানুয়ারী ২০২৫, ১৭:৪৪

ছবি : মামুন রশীদ

ছবি : মামুন রশীদ

জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ আসন্ন জুন ২০২৫-এ গণপরিষদ নির্বাচন এবং রাষ্ট্রপতি শাসিত বিপ্লবী সরকার গঠনের দাবিতে ১১ দফা ঘোষণা করেছে। ৫ আগস্টের ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে জুলাই মাসের গণবিপ্লব বিজয়ী হলেও, অন্তর্বর্তী সরকার বিপ্লবের মূল চেতনার পরিপন্থী কার্যকলাপ করছে বলে অভিযোগ করেছে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ।

পরিষদের রাজনৈতিক প্রধান আনিছুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রাষ্ট্রযন্ত্রে পুরনো ‘ফ্যাসিস্ট’দের বহাল রাখা, জুডিশিয়াল প্রক্রিয়া ও সংবিধান সংস্কারের নামে প্রতারণা, অর্থনীতি ধ্বংস এবং বিপ্লবীদের উপেক্ষা-কোণঠাসা করার নীতি অন্তর্বর্তী সরকার অবলম্বন করছে। বিশেষ করে, অন্তর্বর্তী সরকার প্রশাসন, আদালত, সেনাবাহিনী এবং পুলিশসহ সমগ্র রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে ‘পতিত ফ্যাসিস্ট’দের অপসারণ না করে, বিএনপি-জামায়াতের কিছু কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিয়েছে।

এছাড়াও ‘গণহত্যা-গুম-খুনে’ জড়িতদের বিচারের নামে প্রতারণা, '৭২-এর ‘ফ্যাসিস্ট’ সংবিধান বহাল রেখে সংস্কারের নামে সময়ক্ষেপণ এবং ব্যবসায়ীদের ওপর নতুন করে ভ্যাট আরোপের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় শোষণ বৃদ্ধির মত বিষয়গুলি তিনি তুলে ধরেন।

পরিষদ মনে করে, অন্তর্বর্তী সরকারের অব্যবস্থাপনা এবং ছাত্রসমাজের একটি ক্ষুদ্র অংশের সরকারের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। জুলাই বিপ্লবের মূল চালিকাশক্তি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সকল অংশগ্রহণকারীদের ন্যায্য স্বীকৃতি প্রদান না করে কেবলমাত্র গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির নেতারাই সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে বলে অভিযোগ করেছে সংগঠনটি। জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের একটি নাগরিক সমাবেশে হামলার ঘটনায় সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় হামলাকারীদের রক্ষা করার অভিযোগও তুলে ধরা হয়।

এ পরিস্থিতিতে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে নবায়ন করতে এবং দ্রুততম সময়ে দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে ১১ দফা দাবি ঘোষণা করেছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন বিপ্লবী সরকার গঠন এবং দ্রুততম সময়ে নতুন সংবিধান প্রণয়নের দাবিও জানানো হয়েছে।

১১ দফা দাবির বিস্তারিত:

১. বিচার: জুলাই গণহত্যা, শাপলা চত্বর, পিলখানা হত্যাকাণ্ড এবং বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের হত্যার বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন এবং জড়িতদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা। জড়িতদের দেশ-বিদেশ থেকে বন্দী করে আনার জন্য বিশেষ বাহিনী গঠন। ‘ফ্যাসিস্ট’ রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, সাংস্কৃতিক ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বাতিলকরণ। ছয় মাসের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ ও সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা।

২. ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন: শহীদ পরিবারের সদস্যদের ক্ষতিপূরণ এবং আহতদের পুনর্বাসন ও চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করা।

৩. গণপরিষদ নির্বাচন: জুন ২০২৫-এ গণপরিষদ নির্বাচন। গণপরিষদে শহীদ পরিবারের সদস্য, ছাত্র, নাগরিক ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্তি।

৪. বর্তমান ব্যবস্থা বাতিল: গণপরিষদ কর্তৃক '৭২ এর সংবিধান বাতিল, রাষ্ট্রপতি অপসারণ এবং উপদেষ্টা সরকার ভেঙে দেওয়া।

৫. বিপ্লবী সরকার গঠন: ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে রাষ্ট্রপতি শাসিত বিপ্লবী সরকার গঠন। এ সরকারের একটি অন্তর্বর্তী মন্ত্রিপরিষদ থাকবে যার নেতৃত্ব দিবেন গণপরিষদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী।

৬. নতুন সংবিধান ও নির্বাচন: জানুয়ারি ২০২৬ এর মধ্যে নতুন সংবিধান প্রণয়ন এবং তিন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন।

৭. জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ: ড. ইউনূসকে চেয়ারম্যান এবং সেনাপ্রধানকে ভাইস-চেয়ারম্যান করে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ গঠন। এ পরিষদ দেশ বিরোধী সকল চুক্তি পর্যালোচনা করে বাতিল করবে, সকল বাহিনীকে পুনর্গঠন করবে এবং পুনর্গঠনকালীন সময়ে জাতীয় নিরাপত্তা ও সামাজিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করবে।

৮. জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ: ব্যবসায়ীদের নেতৃত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ গঠন করে অর্থনীতি সচল ও সংস্কার, কালো টাকা উদ্ধার ও সিন্ডিকেট ভাঙা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য জনগণের আয়ত্তের মধ্যে রাখা।

৯. শিক্ষা সংস্কার: আধুনিক, উন্নত মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলার উপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে শিক্ষা কমিশন গঠন। শিক্ষকতাকে প্রথম শ্রেণীর পেশা ঘোষণা করে শিক্ষকদের সর্বোচ্চ বেতন প্রদান। মাস্টার্স পর্যন্ত শিক্ষা বিনামূল্যে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য সুদমুক্ত শিক্ষা ঋণ চালু। সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সারাদেশে উন্নত আবাসন ব্যবস্থা চালু।

১০. স্বাস্থ্যসেবা: সকল গরিব ও মেহনতি মানুষের চিকিৎসা খরচ রাষ্ট্র বহন করবে। সকল নাগরিকের জন্য ব্যয়বহুল জটিল রোগের চিকিৎসা বিনামূল্যে হতে হবে। চিকিৎসা ব্যবস্থা আধুনিকায়নের লক্ষ্যে সকল বিভাগে একাধিক বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

১১. শ্রমিক কল্যাণ: ঘণ্টা প্রতি সার্বজনীন মজুরি ঘোষণা করতে হবে। বিনা সুদে কর্মসংস্থান ঋণ প্রদাদের পাশাপাশি শ্রমজীবীদের জন্য আবাসন ও সন্তানদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে।

আনিছুর রহমান জানান, ১১ দফা বাস্তবায়নে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ, এই দুই মাসব্যাপী সারাদেশে নিয়মিত মিছিল, বিভাগীয় ও মহানগর নাগরিক সমাবেশ, রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন, শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে মত বিনিময় সভা, রাজধানী ও বন্দরনগরীতে পথসভা, দেশজুড়ে সেমিনার ও গোলটেবিল বৈঠকসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হবে।

দাবি আদায় না হলে আন্দোলন আরও তীব্রতর হবে বলেও তিনি হুঁশিয়ারি দেন।

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)
আরো পড়ুন

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

নামাজের সময়সূচি

ওয়াক্ত সময়সূচি
ফজর ০৫:২২ ভোর
যোহর ১২:১২ দুপুর
আছর ০৪:০৭ বিকেল
মাগরিব ০৫:৪৬ সন্ধ্যা
এশা ০৭:০১ রাত

বৃহঃস্পতিবার ৩০ জানুয়ারী ২০২৫