শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু তায়ালা এমন এক সময়ে ইসলাম গ্রহণ করেন যখন মুসলমানের সংখ্যা ছিল মাত্র ৪০ জন। তখন কেউ ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দিলে অথবা কারো কারো ইসলাম গ্রহণের বিষয়ে জানতে পারলে মক্কার কাফেরেরা তার ওপর নির্যাতন শুরু করে দিতো। মুসলমানরা সেই সময় গোপনে লুকিয়ে লুকিয়ে নামাজ আদায় করতেন। ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু তায়ালা নিজেও প্রথম দিকে ইসলামের আহ্বানের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছিলেন।
ইসলাম গ্রহণ-
ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু সবসময় নির্ভীক ছিলেন। তিনি যা সত্য ও সঠিক মনে করতেন অপকটে তা মেনে নিতেন এবং সবার সামনে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিতেন। আল্লাহ তায়ালা তার অন্তরে ইসলামের নূর ঢেলে দেওয়ার পর তিনি মক্কার কাফেরদের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে ঘোষণা দিয়ে ইসলাম গ্রহণ করলেন এবং বায়তুল্লাহতে গিয়ে সবার সামনে নামাজ আদায় করলেন। মুশরিকরা ইসলাম গ্রহণের কারণে অন্যদের নির্যাতন করলেও তাকে কিছু বলার বা করর সাহস পেল না।
খেলাফতের দায়িত্ব-
ওমর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর ইসলাম গ্রহণ মুসলমানদের শক্তিশালী করেছিল। ইসলাম গ্রহণের মতো তার শাসনামলও মুসলিমদের শক্তিশালী করেছিল।
তিনি খলিফা নির্বাচত হন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর ইন্তেকালের পর। তবে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বিশৃঙ্খলা এড়াতে নিজের ইন্তেকালের আগেই তাকে পরবর্তী খলিফা মনোনীত করে যান।
হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নিজের অন্তিম সময়ে বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবদুর রহমান ইবন আউফ, উসমান ইবন আফফানসহ আরও বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সাহাবির সঙ্গে আলোচনা করে ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে খলিফা নিযুক্ত করে ফরমান জারি করেন। তার সেই ফরমান লিখেছিলেন উসমান ইবনে আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। সেই ফরমানে লেখা হয়েছিল-
‘বিস্মিল্লাহির রাহমানির রাহীম। এটা আবু বকর ইবন আবী কুহাফার পক্ষ থেকে মুসলমানদের প্রতি অঙ্গীকার। আম্মাবাদ‘ আমি তোমাদের জন্য ’ওমর ইবনুল খাত্তাবকে খলীফা মনোনীত করলাম এবং এ ব্যাপারে তোমাদের কল্যাণ চেষ্টায় কোন ত্রুটি করি নাই।’
ওমর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ১৩ হিজরি থেকে ২৪ হিজরি মোতাবেক ৬৩৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ৬৪৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় খলিফার দায়িত্ব পালন করেন। তার সময়ে সর্বাধিক অঞ্চল মুসলমানদের শাসনের অধীনে এসেছিল। তাকে অর্ধজাহানের খলিফা বলা হতো।
ওমর রা.-এর শাসনামলে মুসলমানরা যেসব দেশ বিজয় করেন-
তার শাসনামলে বিজিত ভূখণ্ডের আয়তন ছিল সাড়ে বাইশ লক্ষ বর্গমাইল। এ সময় মুসলমানরা যেসব দেশ, প্রদেশ ও অঞ্চল বিজয় করেছিলেন সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- পারস্য, ইরাক, জাজিরাহ, খুরাসান, বেলুস্তিান, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, মিসর, আর্মেনিয়া।
তিনি হিজরি ২২ সনে ইসলামী লাষ্ট্রকে বিভিন্ন প্রদেশে বিভক্ত করেন। তার বিভিন্ন প্রদেশগুলোর মধ্যে রয়েছে, মক্কা মুকাররামাহ, মদিনা মুনাওয়ারা, সিরিয়া, জাজিরা, বসরা, কুফা, মিসর, ফিলিস্তিন, খুরাসান, আজারবাইন ও পারস্য।
এর মধ্যে কোনো কোনো প্রদেশের আয়তন ছিল দুটি প্রদেশের সমান। কোনো কোনো প্রদেশের দুটি কেন্দ্র ছিল এবং প্রত্যেক কেন্দ্রের পৃথক পৃথক কর্মকর্তা ও কর্মচারী ছিলেন। প্রত্যেক প্রদেশের একজন ওয়ালী বা কর্মকর্তা, একজন কাতিব (সচিব) বা মীর মুনশী, একজন সেনানায়ক, একজন সাহিবুল খারাজ বা কালেক্টর, একজন পুলিশ অফিসার, একজন ট্রেজারি অফিসার একজন বিচারক অবশ্যই থাকতেন।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)