রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ কার্তিক ১৪৩১
শিশু জন্মের পর আয়োজন করে তার নাম রাখা হয়। সারাজীবন শিশুটিকে সেই নামেই ডাকা হয়। মানুষ একে অপরকে নাম ধরে ডাকে। কিন্তু অন্য প্রাণীরা? জানা যাচ্ছে, আফ্রিকান হাতিরা তাদের বাচ্চাদের নাম রাখে। একে অপরকে ডাকতে কিংবা একে অন্যের সঙ্গে কথা বলতেও তারা এই নাম ব্যবহার করে। এখানেই শেষ নয়। এসব নামের সঙ্গে মানুষের দেওয়া নামেরও অনেক মিল রয়েছে।
নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই অদ্ভুত তথ্য। গবেষণা বলছে, হাতিরা অন্য হাতিদের সম্বোধন করার জন্য ব্যক্তিগত নামের মতো করে ডাকতে শিখেছে। এই ডাক শুনে তারা একে অপরকে চিনতেও পারে।
নেচার ইকোলজি অ্যান্ড ইভোলিউশন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে বন্য আফ্রিকান হাতি নিয়ে এই গবেষণাটি। কয়েক বছর ধরে, গবেষকরা হাতি নিয়ে অধ্যয়ন করে এমন চমকপ্রদ ঘটনা লক্ষ্য করেছেন। গবেষকরা দেখেছেন, কখনও কখনও একটি হাতি যখন অন্য হাতির একটি দলকে ডাকে, তখন তাদের ডাকে সবাই সাড়া দেয়। কিন্তু কখনও কখনও যখন সেই একই হাতি দলটিকে একই রকম ডাক দেয়, তখন কেবল একজন সাড়া দেয়। এমনটা হতে পারে যে হাতিরা একে অপরকে নিজস্ব নাম দিয়েই সম্বোধন করে। কেনিয়ার বন্য আফ্রিকান সাভানা হাতিদের সঙ্গে জড়িত একটি নতুন গবেষণা এমনটাই প্রমাণ দিয়েছে।
গবেষকরা আম্বোসেলি ন্যাশনাল পার্ক এবং সাম্বুরু ন্যাশনাল রিজার্ভের ১০০ টিরও বেশি হাতির কণ্ঠস্বর বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, বেশিরভাগ হাতি তাদের ভোকাল কর্ড ব্যবহার করে এই ডাকাডাকি করে। একটি মেশিন-লার্নিং মডেল ব্যবহার করে, গবেষকরা চিহ্নিত করেছেন যে এসব ডাকে একটি নাম-সদৃশ উপাদান রয়েছে, যা একটি নির্দিষ্ট হাতিকে চিহ্নিত করে।
এরপর গবেষকরা ১৭টি হাতির জন্য অডিওটি বাজিয়েছিলেন, তারা কীভাবে সাড়া দেয় তা পরীক্ষা করার জন্য। এই অডিও শুনে হাতিরা গড়ে আরও জোরালোভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল। অডিওর উৎসের দিকে হেঁটে গিয়েছিল।
গবেষণার প্রধান লেখক কর্নেল ইউনিভার্সিটির আচরণগত বাস্তুবিজ্ঞানী এবং কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন মিকি পারডোর মতে, গবেষণার ফলাফলগুলো ইঙ্গিত দেয় যে হাতিরা একটি নামের মতো কিছু দিয়ে একে অপরকে সম্বোধন করে।
এই বিজ্ঞানীর মতে, হাতিরা একে অপরকে ব্যক্তি হিসাবে সম্বোধন করে। এই স্বভাব তাদের মধ্যে সামাজিক বন্ধনের গুরুত্ব তুলে ধরে। তারা দূরবর্তী হাতির দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য নির্দিষ্ট কণ্ঠস্বর ব্যবহার করে। এই স্বভাবটি অনেকটা মানুষের মতোই। অর্থাৎ মানুষ যেভাবে নিজেদের নাম ডাকার সময় আরও ইতিবাচক এবং সহযোগিতামূলকভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়, হাতিও একইভাবে এগিয়ে আসে।
মানুষ কি কখনো হাতির সঙ্গে কথা বলতে পারবে?
গবেষকরা বলেন, এমনটা হলে অবশ্যই চমৎকার বিষয় হবে। তবে আমরা এখনও এটি থেকে অনেক দূরে আছি। আমরা এখনও সিনট্যাক্স বা মৌলিক উপাদানগুলো জানি না যার দ্বারা হাতির কণ্ঠস্বর তথ্য এনকোড করে। তাদের বোঝার ক্ষেত্রে গভীর অগ্রগতি করার আগে আমাদের এটি বের করতে হবে।
উল্লেখ্য, হাতি পৃথিবীর বৃহত্তম স্থল প্রাণী। এরা অত্যন্ত বুদ্ধিমান, প্রখর স্মৃতিশক্তির অধিকারী। হাতির সমস্যা সমাধানের দক্ষতা এবং পরিশীলিত যোগাযোগের জন্য পরিচিত। এর আগেও গবেষণায় দেখা গিয়েছিল যে তারা একে অপরকে অভিবাদন করার সময় জটিল আচরণ- চাক্ষুষ, শাব্দিক এবং স্পর্শকাতর অঙ্গভঙ্গিও করে।
সূত্র: রয়টার্স, সিএনএন, ওয়াশিংটন পোস্ট ইত্যাদি
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)