শনিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার এবং টাকা উড়ানোর অভিযোগে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সিবিএ নেতা, নকশাকার শফিউল্লাহ বাবু ওরফে সল্টু বাবুকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
সোমবার (১৩ মে) রাজউক চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. সিদ্দিকুর রহমান সরকার (অবঃ) স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে (নং-২৫.৩৯.০০০০.০০৯.২৭.০০৭.২৩.৮৮২) বাবুকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। একইসাথে বাবুর বিরুদ্ধে নিয়মিত বিভাগীয় মামলা রুজু করাসহ অবিলম্বে আদেশ কার্যকর করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
অফিস আদেশে বলা হয়, “রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, ঢাকা-এর নক্সাকার (চলতি দায়িত্ব) মো. শফিউল্লাহ বাবু, নগর পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন শাখা গত ০৬/০৫/২০২৪ খ্রি. তারিখ রাতে কাজিপুর উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচন-২০২৪ উপলক্ষ্যে শুভগাছা ইউনিয়নে নিজস্ব গাড়ী ব্যবহার করে প্রতিটি গ্রামে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মো. আশরাফুল আলম (প্রতিক ঘোড়া) কে ভোট দেয়ার জন্য অধিকাংশ ভোটারদের ১,০০০/- (এক হাজার) টাকা দেয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। উক্ত অভিযোগের ভিত্তিতে স্মারক নং-২৫.৩৯.০০০০.০০৯.২৭.০০৭.২৩.৮৩০, তারিখ ০৭/০৫/২০২৪ খ্রিঃ এর মাধ্যমে তাকে পত্র প্রাপ্তির ০৩ (তিন) দিনের মধ্যে লিখিতভাবে কারণ দর্শাতে বলা হলে তিনি গত ০৯/০৫/২০২৪ খ্রি. তারিখে জবাব প্রদান করেন।
উক্ত জবাবে তিনি উল্লেখ করেন যে, অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। চেয়ারম্যান মহোদরের সাথে কথা বলার সময় ভয়ে স্তম্ভিত হয়ে সিরাজগঞ্জ শহরে থাকা সত্ত্বেও তিনি বলেন উত্তরা সমিতি অফিসে রয়েছেন। এই অনাকাঙ্খিত মিথ্যা কথা বলার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন ও নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে জবাব দাখিল করেছেন।
আরও পড়ুন : রাজউকের শফিউল্লাহ বাবুকে শোকজ
অন্যদিকে গত ০৮/০৫/২০২৪ খ্রি. তারিখ রাতে কাজিপুর উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচন-২০২৪ শুভগাছা ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামে নিজস্ব গাড়ী ব্যবহার করে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মো. আশরাফুল আলম (প্রতিক ঘোড়া) কে ভোট দেয়ার জন্য অধিকাংশ ভোটারদের এক হাজার টাকা করে দিয়েছেন মর্মে অভিযোগটি অস্বীকার করেন।
তার এ ধরণের কর্মকান্ডে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে এবং কর্মস্থলে বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত থাকায় অফিস শৃংখলা ভঙ্গ হয়েছে, যা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্মকর্তা ও কর্মচারী) চাকুরি বিধিমালা, ২০১৩ এর বিধি ৩৭(ক) অনুযায়ী দায়িত্ব পালনে অবহেলা এবং ৩৭(খ) অনুযায়ী অসদাচরণের সামিল।
বর্ণিতাবস্থায়, মো. শফিউল্লাহ বাবু, নক্সাকার (চলতি দায়িত্ব), নগর পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন শাখা কে উপরিল্লিখিত কর্মকাণ্ডের জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) চাকুরি বিধিমালা, ২০১৩ এর বিধি ৪৩ এর উপবিধি (১) মোতাবেক দায়িত্ব পালনে অবহেলা এবং অসদাচরণের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। তার বিরুদ্ধে নিয়মিত বিভাগীয় মামলা রুজু করা হোক।
মো. শফিউল্লাহ বাবু, নক্সাকার (চলতি দায়িত্ব), নগর পরিকল্পনা ও বাস্তবানে শাখা, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) চাকুরি বিধিমালা, ২০১৩ এর বিধি ৪৩ এর উপবিধি (৪) অনুযায়ী খোরাকী ভাতা প্রাপ্ত হবেন। এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (৭ মে) কাজীপুর উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. খলিলুর রহমান সিরাজী (আনারস প্রতীক) রাজউক চেয়ারম্যান বরাবর শফিউল্লাহ বাবুর নামে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগে খলিলুর রহমান বলেন, উপজেলা নির্বাচন উপলক্ষ্যে সোমবার রাতে ঢাকা থেকে সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলায় গ্রামের বাড়ি গিয়ে পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে ভোট চান শফিউল্লাহ বাবু। এ সময় তিনি ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী আশরাফুল আলমকে ভোট দেওয়ার জন্য শুভগাছা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে টাকা বিলি করেন। রাতেই এ ঘটনার ভিডিও রেকর্ড ঢাকায় রাজউকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়।
পরবর্তীতে ঘটনার সত্যতা জানতে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় বাবুকে ফোন করেন স্বয়ং রাজউক চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সিদ্দিকুর রহমান। এ সময় অবস্থান জানতে চাইলে বাবু মিথ্যা তথ্য দেন। বলেন-দাপ্তরিক কাজে তিনি উত্তরায় আছেন। চেয়ারম্যান তাকে এক ঘণ্টার মধ্যে প্রধান কার্যালয়ে আসতে বলেন। কিন্তু তিন ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও বাবু অফিসে হাজির হতে পারেননি।
এক পর্যায়ে বাবুর অবস্থান জানার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নেয় রাজউক। প্রথমে র্যাব, এরপর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বাবুুর মোবাইল লোকেশন সংগ্রহ করে। এ সময় টাঙ্গাইল এলাকায় তার অবস্থান শনাক্ত করা হয়। ঢাকার বাইরে অবস্থান দেখে র্যাবের একজন কর্মকর্তা বাবুুকে ফোন করেন। কিন্তু তিনি তাকেও মিথ্যা তথ্য দেন। বাবু বলেন, তিনি হাইকোর্ট এলাকায় আছেন। পরে গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা ফোন করলেও একই কথা বলেন বাবুু। এক পর্যায়ে তার মোবাইল ফোনের লোকেশন ও কল লিস্টসহ বর্তমান অবস্থান সম্পর্কিত ডিজিটাল ডাটা রাজউক চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজউক চেয়ারম্যানের ফোন পেয়ে তড়িঘড়ি ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দেন। কিন্তু এতেও তার শেষ রক্ষা হয়নি। ঢাকায় পৌঁছাতে বিকাল হয়ে যায়। তিনি যখন চেয়ারম্যানের দপ্তরে হাজির হন, তখন বিকাল ৪টা। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে ঢাকায় অবস্থানের ব্যাপারে মিথ্যা তথ্য দিলে তাকে সিরাজগঞ্জে অবস্থানের অকাট্য প্রমাণ দেখানো হয়। এ সময় মোবাইল ফোনের কললিস্ট ও লোকেশন দেখানো হলে ভড়কে যান বাবু। এরপর তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এহেন অপরাধের জন্য সল্টু বাবুর বিরুদ্ধ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন রাজউক চেয়ারম্যান। এক্ষেত্রে চাকরিবিধি অনুযায়ী বরখাস্তের আগে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য তাকে ৩ দিনের সময় দেওয়া হয়।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)