বৃহঃস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার এবং টাকা উড়ানোর অভিযোগে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সিবিএ নেতা, নকশাকার শফিউল্লাহ বাবু ওরফে সল্টু বাবুকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
মঙ্গলবার (০৭ মে) রাজউকের পরিচালক (প্রশাসন) মমিন উদ্দিন স্বাক্ষরিত নোটিশে বলা হয়, ‘আপনি শফিউল্লাহ বাবু, নকশাকার (চলতি দায়িত্ব) রাজউক, ৬ মে রাতে কাজীপুর উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচন-২০২৪ উপলক্ষ্যে স্থানীয় শুভগাছা ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামে আপনার নিজস্ব গাড়ি ব্যবহার করে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আশরাফুল আলমকে (প্রতীক ঘোড়া) কে ভোট দেওয়ার জন্য অধিকাংশ ভোটারকে এক হাজার টাকা করে দিয়েছেন মর্মে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আপনার এহেন কার্যকলাপ রাজউক কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরি বিধিমালা-২০১৩-এর ৩৭(খ) বিধি অনুযায়ী অসদাচরণের শামিল এবং প্রশাসনিক শৃঙ্খলার পরিপন্থি। অতএব, বিধি অনুযায়ী আপনার বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সে বিষয়ে পত্র জারির তিনদিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’
জানা গেছে, মঙ্গলবার কাজীপুর উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. খলিলুর রহমান সিরাজী (আনারস প্রতীক) রাজউক চেয়ারম্যান বরাবর শফিউল্লাহ বাবুর নামে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগে খলিলুর রহমান বলেন, “উপজেলা নির্বাচন উপলক্ষ্যে সোমবার রাতে ঢাকা থেকে সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলায় গ্রামের বাড়ি গিয়ে পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে ভোট চান শফিউল্লাহ বাবু। এ সময় তিনি ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী আশরাফুল আলমকে ভোট দেওয়ার জন্য শুভগাছা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে টাকা বিলি করেন। রাতেই এ ঘটনার ভিডিও রেকর্ড ঢাকায় রাজউকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়।
পরবর্তীতে ঘটনার সত্যতা জানতে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় বাবুকে ফোন করেন স্বয়ং রাজউক চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সিদ্দিকুর রহমান। এ সময় অবস্থান জানতে চাইলে বাবু মিথ্যা তথ্য দেন। বলেন-দাপ্তরিক কাজে তিনি উত্তরায় আছেন। চেয়ারম্যান তাকে এক ঘণ্টার মধ্যে প্রধান কার্যালয়ে আসতে বলেন। কিন্তু তিন ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও বাবু অফিসে হাজির হতে পারেননি।
এক পর্যায়ে বাবুর অবস্থান জানার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নেয় রাজউক। প্রথমে র্যাব, এরপর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বাবুুর মোবাইল লোকেশন সংগ্রহ করে। এ সময় টাঙ্গাইল এলাকায় তার অবস্থান শনাক্ত করা হয়। ঢাকার বাইরে অবস্থান দেখে র্যাবের একজন কর্মকর্তা বাবুুকে ফোন করেন। কিন্তু তিনি তাকেও মিথ্যা তথ্য দেন। বাবু বলেন, তিনি হাইকোর্ট এলাকায় আছেন। পরে গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা ফোন করলেও একই কথা বলেন বাবুু। এক পর্যায়ে তার মোবাইল ফোনের লোকেশন ও কল লিস্টসহ বর্তমান অবস্থান সম্পর্কিত ডিজিটাল ডাটা রাজউক চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজউক চেয়ারম্যানের ফোন পেয়ে তড়িঘড়ি ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দেন। কিন্তু এতেও তার শেষ রক্ষা হয়নি। ঢাকায় পৌঁছাতে বিকাল হয়ে যায়। তিনি যখন চেয়ারম্যানের দপ্তরে হাজির হন, তখন বিকাল ৪টা। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে ঢাকায় অবস্থানের ব্যাপারে মিথ্যা তথ্য দিলে তাকে সিরাজগঞ্জে অবস্থানের অকাট্য প্রমাণ দেখানো হয়। এ সময় মোবাইল ফোনের কললিস্ট ও লোকেশন দেখানো হলে ভড়কে যান বাবু। এরপর তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এহেন অপরাধের জন্য সল্টু বাবুর বিরুদ্ধ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন রাজউক চেয়ারম্যান। এক্ষেত্রে চাকরিবিধি অনুযায়ী বরখাস্তের আগে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য তাকে ৩ দিনের সময় দেওয়া হয়। আগামীকাল বৃহস্পতিবার শোকজের জবাব দিতে হবে শফিউল্লাহ বাবুকে।
শোকজের বিষয়ে শফিউল্লাহ বাবুর মুঠোফোনে কল দিয়ে জানতে চাইলে তিনি কলটি রিসিভ করেন নি।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)