শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১
ইংল্যান্ডের ঘরোয়া টুর্নামেন্টগুলোকে যেন ক্রিকেটাররা প্রাধান্য দেন, সেলক্ষ্যে দেশটির ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) কড়াকড়ি আরোপ করতে যাচ্ছে। নিজেদের টুর্নামেন্ট ভাইটালিটি ব্লাস্ট এবং দ্য হান্ড্রেড টুর্নামেন্ট দুটিকে এড়িয়ে কেউ যেন বিদেশি কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ না নেন সেজন্য এনওসি নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। বিষয়টি ইংলিশ ক্রিকেটারদের পছন্দ হয়নি। ফলে বোর্ডের বিরুদ্ধে তারা বিদ্রোহ করতে পারেন বলে গুঞ্জন উঠেছে!
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ জানিয়েছে, ৫০ জন শীর্ষ ইংলিশ ক্রিকেটার আসন্ন হান্ড্রেড টুর্নামেন্ট বয়কট করার কথা ভাবছেন। যাকে বলা হচ্ছে– বিদেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে যেতে ইসিবির এনওসি বা অনাপত্তিপত্র না দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। এর আগে ইসিবির নতুন নিয়মে বলা হয়– প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেন না এমন ক্রিকেটাররা সাদা বলের ঘরোয়া টুর্নামেন্টও যাতে বাদ না দিয়ে বসেন। কিন্তু ওই সময়েই অনুষ্ঠিত হবে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) এবং পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল)।
আগামী বছরের এপ্রিল-মে মাসে বসতে যাচ্ছে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট দুটি। তবে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই আইপিএলে ইংলিশ ক্রিকেটারদের পাওয়ার ব্যাপারে নিলামের আগেই নিশ্চয়তা আদায় করে নিয়েছে। ফলে ইসিবির নতুন সিদ্ধান্তে তাদের বেগ পেতে হবে না। অন্যদিকে, মূল ঝামেলায় পড়বে পাকিস্তান। একে তো আইপিএল একই সময়ে চলার কারণে তারা কাঙ্ক্ষিত বিদেশি ক্রিকেটার পাচ্ছে না, তার ওপর ইংল্যান্ডের ক্রিকেটাররাও পিএসএলে না গেলে টুর্নামেন্টটির আকর্ষণ অনেকটাই হারাবে!
ইংল্যান্ডের ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট ভাইটালিটি ব্লাস্টের পরবর্তী আসর আগামী বছরের ২৯ মে শুরু হয়ে ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে। স্বাভাবিকভাবেই ১৮টি দলের অংশগ্রহণে এই টুর্নামেন্ট হওয়ায় এর সূচিও থাকে ম্যারাথন, দীর্ঘ মেয়াদে। ফলে কেবল পিএসএলই নয়, ওই সময়ে চলমান কোনো বিদেশি টুর্নামেন্টেই অংশ নেওয়ার পথ বন্ধ করতে চায় ইসিবি। সেই সময় চলবে যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ ক্রিকেট (এমএলসি), কানাডার গ্লোবাল টি-২০, লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগ, ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ। অর্থাৎ, এনওসি না পেলে ইংলিশ ক্রিকেটাররা বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।
পুরো বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ক্রিকেটার ও তাদের এজেন্টরা প্রফেশনাল ক্রিকেটারস এসোসিয়েশনের (পিসিএ) ছায়ায় এই সপ্তাহে একটি সভা করেছে। টেলিগ্রাফের তথ্যমতে– দুটি সভা হয়েছে, গত সোমবার প্রায় ৫০ ক্রিকেটারদের নিয়ে একটি এবং বুধবার আরেক সভায় পিসিএ’র সঙ্গে বসেন তাদের এজেন্টরা। সব পক্ষের আলোচনা শেষে ক্রিকেটারদের পক্ষে দাবি নিয়ে ইসিবির কাছে যেতে পারে পিসিএ। তবে ক্রিকেটারদের একটি অংশ এমন দফারফা ছাড়াই নাকি ইসিবিকে বয়কটের কথাও ভাবছেন!
সাধারণত ক্রিকেটারদের সঙ্গে বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজির দীর্ঘ মেয়াদে চুক্তি থাকে। আকর্ষণীয় সেসব চুক্তি যাতে ভেস্তে না যায়, সেলক্ষ্যে কিছু সংখ্যক ক্রিকেটার আবার লাল-বলের ক্রিকেট থেকে অবসরের পথে হাঁটতে পারেন। টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে এক সূত্র জানান, ‘নীতিগতভাবে ক্রিকেটাররা আসলেই শক্ত অবস্থান নিতে যাচ্ছেন, যা তাদের অনুভূতির জানান দিচ্ছে। যখন আর্থিক বিষয় চলে আসে, তখন ডোমিনো ইফেক্ট (ছোট ঘটনা থেকে ধারাবাহিকভাবে বড় ঘটনায় মোড় নেওয়া) দেখা দিতে পারে।’
এর আগে ইসিবির প্রধান নির্বাহী রিচার্ড গোল্ড বলেছিলেন, ‘আমরা আমাদের খেলার প্রতি সততা এবং ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে হওয়া টুর্নামেন্টের শক্তি-সামর্থ্য বজায় রাখতে চাই। এই নিয়মে ক্রিকেটার ও কাউন্টি ক্লাবগুলোকে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি বা ছাড়পত্র) দেওয়ার বিষয়ে বোর্ডের অবস্থান পরিষ্কার করা হবে। বাইরের দেশে খেলার অভিজ্ঞতা অর্জন এবং নিজেদের টুর্নামেন্টও ঠিক রাখার ভারসাম্য বজায় রাখাই মূল লক্ষ্য। যাতে কেউ আমাদের ঘরোয়া টুর্নামেন্টকে কোনোভাবেই ছোট না ভাবে।’
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)