শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
নিউজিল্যান্ড সফরে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে আজ মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। ডানেডিনে দুই দলের ম্যাচটি বারবার পড়েছে বৃষ্টির বাঁধায়। এক ঘন্টা দেরিতে খেলা শুরুর পর কিউইদের ব্যাটিং ইনিংসের সময়ও দুইবার ম্যাচ বন্ধ ছিল বৃষ্টির কারণে। শেষ পর্যন্ত ম্যাচ কমিয়ে আনা হয় ত্রিশ ওভারে। পরে অধিনায়ক টম ল্যাথামের ৯২ এবং উইল ইয়াংয়ের দুর্দান্ত সেঞ্চুরির সুবাদে নির্ধারিত ত্রিশ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে নিউজিল্যান্ড ২৩৯ রান সংগ্রহ করলেও বৃষ্টি আইনে টাইগারদের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৪৫ রান। এ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই সৌম্য সরকার ডাক মেরে বিদায় নেয়ার পর ব্যাট হাতে ব্যর্থ হয়েছেন অধিনায়ক শান্ত, লিটন দাস, মুশফিকুর রহিমরা। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৩০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ ২০০ রানে থামলে বৃষ্টি আইনে ৪৪ রানের জয় পায় স্বাগতিকরা।
২৪৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি টাইগারদের। ব্যাট হাতে আজ উদ্বোধনী জুটিতে নেমেছিলেন এনামুল হক বিজয় এবং সৌম্য সরকার। তবে অ্যাডাম মিলনের করা ইনিংসের প্রথম ওভারের চতুর্থ বলে স্লিপে ক্যাচ তুলে দিয়ে শূন্য রানেই আজ সাজঘরে ফিরেছেন সৌম্য। এরপর ক্রিজে বিজয়ের সঙ্গী হন শান্ত।
তবে অধিনায়ক শান্তও আজ দলের হাল ধরতে পারেননি। বিজয়ের সঙ্গে ৪৬ রানের জুটি গড়লেও নিজের ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনি। সপ্তম ওভারে ইশ সোধির বলে বোল্ড হয়ে ১৫ রান করেই সাজঘরে ফিরেন তিনি।
এদিকে টাইগারদের হয়ে শুরু থেকেই প্রতিরোধ গড়েছিলেন আরেক ওপেনার এনামুল বিজয়। কিউই বোলারদের সামলে তিনি এগিয়ে যাচ্ছিলেন ব্যক্তিগত অর্ধশতকের দিকে। তবে দ্বাদশ ওভারে ক্লার্কসনের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে ৪৩ রানেই সাজঘরে ফিরেন তিনি।
বিজয় আউট হওয়ার পর লিটনও সাজঘরের পথ ধরেন দ্রুতই। ১৯ বলে ২২ রান করে ক্লার্কসনের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন তিনি। ফলে চার টপ অর্ডার ব্যাটার হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ।
আর চাপে পড়া দল আরও বিপাকে পড়ে মুশফিকের বিদায়ে। অভিজ্ঞ এই টাইগার ব্যাটার আজ ১০ বলে ৪ রান করে ফিরেন রাচীন রবীন্দ্রের শিকার হয়ে। তবে এরপর কিছুটা আশা জাগিয়েছিলেন আফিফ হোসেন এবং হৃদয়।
এ দুজন মিলে কিউই বোলারদের সামলে স্কোরবোর্ডে যোগ করেন ৫৬ রান। তবে ইশ সোধির বলে ছয় মারতে গিয়ে ক্যাচ আউট হয়ে হৃদয় ৩৩ রান করে সাজঘরে ফিরলে ভাঙে এ জুটি। পরের ওভারেই ওভারেই আউট হন আফিফও। ৫ চার এবং ১ ছয়ে ২৮ বলে ৩৮ রান করে আফিফ আউট হলে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় লাল-সুবুজ দল।
এরপর ২১ বলে মিরাজের ২৮ রান হারের ব্যবধান কমিয়েছে কেবল। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেমেছে ত্রিশ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২০০ রানেই। কিউইদের হয়ে সর্বোচ্চ ২টি করে উইকেট নিয়েছেন অ্যাডাম মিলনে, সোধি এবং জোশ ক্লার্কসন।
এর আগে ডানেডিনে আজ টসে জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অধিনায়ক শান্ত। তবে এরপরই নামে বৃষ্টি। ফলে ঘণ্টাখানেক পর ভোর ৫টা ১০ মিনিটে শুরু হয় খেলা। ততক্ষণে ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমিয়ে আনা হয় ৪৬ ওভারে।
এদিকে খেলা শুরু হওয়ার পরই বল হাতে বাংলাদেশকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন শরিফুল ইসলাম। টাইগার বোলার নিজের প্রথম ওভারেই সাজঘরের পথ দেখান দুই কিউই ব্যাটারকে।
টাইগার এ বোলারের করা ইনিংসের চতুর্থ বলেই উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের হাতে ক্যাচ হয়ে সাজঘরে ফিরেন রাচীন রবীন্দ্র। এরপর ওভারের শেষ বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে এনামুল হক বিজয়ের মুঠোবন্দী হয়ে সাজঘরে ফিরেন হেনরি নিকোলস। শরিফুল প্রথম ওভারেই দুই কিউই ব্যাটারকে শূন্য রানে সাজঘরে পাঠালে উড়ন্ত সূচনা পায় বাংলাদেশ। তবে এরপর বেশ শক্ত প্রতিরোধই গড়ে কিউইরা।
আরেক ওপেনার উইল ইয়াং এবং অধিনায়ক টম ল্যাথাম মিলে ভালোই সামলেছেন টাইগার বোলারদের। এদিকে ম্যাচের ১৪ ওভারের সময় আবার বাগড়া দেয় বৃষ্টি। ফলে ফের খেলা বন্ধ থাকে ত্রিশ মিনিট। কমিয়ে আনা হয় আরও ৬ ওভার। আবার শুরু হওয়ার পর ম্যাচের ১৯.২ ওভারের সময় আরও একবার বৃষ্টি নামলে ফের বন্ধ হয় খেলা। পরে আবার খেলা শুরু হলেও ম্যাচ কমিয়ে আনা হয় ত্রিশ ওভারে।
তবে পরিবর্তিত অবস্থায়ও বেশ বড় এক সংগ্রহই গড়েছে কিউইরা। ব্যাট হাতে স্বাগতিকদের আজ পথ দেখিয়েছেন অধিনায়ক ল্যাথাম এবং ইয়াং। ৭৭ বলে ৯২ রান করে ল্যাথাম সাজঘরে ফিরেন দলীয় ১৭৬ রানে। তবে এরপর রানের চাকা ঘুরিয়েছেন ইয়াং।
ম্যাচ ত্রিশ ওভারে গড়ানোর পর কিউই এই ওপেনারও দ্রুত রান তুলেছেন। ইনিংসের শেষ ওভারে সাজঘরে ফিরলেও করেছেন দুর্দান্ত এক শতক। রান আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে ৮৪ বল খেলে ১৪টি চার আর ৪টি ছয়ে করেছেন ১০৫ রান। তার দুর্দান্ত এই শতকেই শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেট হারিয়ে নির্ধারিত ত্রিশ ওভারে ২৩৯ রানের সংগ্রহ পায় কিউইরা।
এদিকে টাইগার বোলারদের মধ্যে আজ শরিফুল প্রথম দুই উইকেট তুলে নেয়ার পর ম্যাচে আর একটি উইকেট পেয়েছেন মেহেদী মিরাজ। কিউইদের বাকি চারজন ব্যাটারই আজ হয়েছে রান আউট।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)