শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
কথায় আছে, যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে। বাংলাদেশের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান রান্নাও করছেন না, চুলও বাঁধছেন না। তবে যা করছেন, তা এই প্রবচনের সমর্থক। দ্বাদশ জাতীয় সংসদের একজন নির্বাচিত সদস্য তিনি। নির্বাচনের সময়ে মানুষের দ্বারপ্রান্তে গিয়ে ব্যতিক্রমী প্রচারণা চালিয়ে আলোচনায় উঠে আসেন।
ভক্তরা এক নতুন সাকিবকে আবিষ্কার করেন। নির্বাচন শেষে ফেরেন আবার ক্রিকেটের মাঠে। এর মধ্যে আঙুলের সমস্যা নিয়েও কাজ করে গেছেন। ব্যবসায়ের কাজটিও করছেন সব কাজের মধ্য দিয়ে। আর পরিবারকেও সামলিয়ে যাচ্ছেন নিজের মতো করে। সবমিলিয়ে ২২ গজের অলরাউন্ডার হয়ে উঠেছেন মাঠের বাইরেরও অলরাউন্ডার।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ হয়ে গেল ৭ জানুয়ারি। মাগুড়া-১ আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে সেদিন রাতেই ঢাকা ফেরেন সাকিব। পরের দিন সকালে মিরপুরে নেমে পড়েন অনুশীলনে। মাঠকর্মী থেকে শুরু করে গণমাধ্যমকর্মী, সবাই অবাক হয়েছেন সাকিবের সেই কর্মতত্পরতা দেখে। সাকিব বিশ্বাস করেন, সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ে দশ ফোঁড়। তাই একমুহূর্ত সময়ক্ষেপণ না করে নেমে পড়েন নিজের পরবর্তী গন্তব্যে। সাকিব লড়াই করছেন। কখনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে, কখনো নিজের বিপক্ষে, কখনো পরিস্থিতির বিপক্ষে। এই লড়াইয়ে সাকিবের পাশে যেন ‘রাজা’ বিশেষণ যুক্ত হয়েছে।
বিপিএলের দশম আসরের শুরুতে ব্যাটিং সমস্যায় ভুগতে থাকেন সাকিব। বেশ কিছু ম্যাচে নিজের পছন্দের জায়গায় ব্যাটিং করতে পারেননি। কয়েকটি ম্যাচে নেমেছেন শেষদিকে। আবার কোনো ম্যাচে নামেননি। হতাশার কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘সমস্যাটা কোথায় হচ্ছে, সেটাই বের করার চেষ্টা করছি।’ বিসিবিসহ বেশ কয়েকটি সূত্রে জানা গিয়েছিল, সাকিব চোখের সমস্যায় ভুগছেন। তবে সেটিকে ঠিক চোখের সমস্যা বলতে রাজি নন তিনি। এই মুহূর্তে সাকিব রানে ফিরেছেন। হয়তো তিনি তার সমস্যা ধরতে পেরেছেন। তবে মাঠে এখনো পুরোপুরি স্বস্তিতে নেই তিনি। সবশেষ ম্যাচে রংপুর রাইডার্সের জার্সিতে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে ৩৯ বলে ৬২ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেছেন তিনি। আপাতদৃষ্টিতে সেটিকে মনে হতে পারে, ঠিক হয়ে গেছে সাকিবের ‘চোখের সমস্যা’। তবে এই ম্যাচটিতেও ব্যাটিংয়ের সময়ে লড়াই করেছেন তিনি। কখনো কখনো মাথা কাত করে বল দেখতে হয়েছে। পরিবর্তন করতে হয়েছে ব্যাটিং কৌশল। এর আগের ম্যাচে ৩১ বলে ৬৯ রান করেছিলেন খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে। সেদিনও নিজেকে খুঁজে পেয়েও যেন অচেনা মনে হচ্ছিল সাকিবকে।
তবে সাকিব বিশ্বাস করেন, আঁধার কেটে আলো আসবেই। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নড়াইল-২ আসন থেকে প্রথম বারের মতো নির্বাচিত হয়েছিলেন সে সময়কার অধিনায়ক মাশরাফী বিন মর্তুজা। এরপর ১৮টির মতো ম্যাচ খেলে ১২টি উইকেট দখল করেছিলেন তিনি। আস্তে আস্তে সে যাত্রার ইতি ঘটে সেখানেই। এ বছরও নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। তবে ক্রিকেটার মাশরাফীকে যেন খুঁজে পাওয়াই যাচ্ছে না। চলতি বিপিএলে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। মুখে না বললেও জাতীয় দলেও তার ইতি ঘটে গেছে বলা চলে। এই জায়গা থেকে ব্যতিক্রম বলা চলে সাকিবকে।
মাশরাফী সংসদ সদস্য হওয়ার পর নিজের এলাকা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সাধ্যমতো ক্রিকেটটাকেও রেখেছেন চর্চায়। আর সাকিব ক্রিকেটটাকে কেন্দ্রে রেখে ঘুরছেন সারা বিশ্বের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে। বিপিএলে নিজের প্রথম পাঁচ ইনিংসে তেমন রান না পেলেও গত দুই ইনিংস নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে। তবে সাকিব বল হাতে পিছিয়ে নেই। ৯ ম্যাচ থেকে ১৩ উইকেট নিয়ে রয়েছেন সেরাদের কাতারে। ব্যাটে রানখরায় ভুগতে থাকার সময়ে বোলার হিসেবেই খেলেছেন তিনি। আক্ষেপ নিয়ে বলেছেন, ‘জীবনে কখনও এরকম করিনি। যে কোনো একটা সাইড দিয়ে (বোলিং অথবা ব্যাটিং) খেলতে হয়েছে, এরকম কখনও হয়নি। প্রথম বার।’ আপাতত সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে এসেছেন সাকিব। কোনো ভাবনা ছাড়া সাকিব মাঠে ফেরার যে চেষ্টা করেছেন তাতে তিনি শতভাগই সফল।
কিন্তু নিজেকে গড়তে আরো সময় নিতে চান। সামনের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চোখ রেখেছেন তিনি। তাই তো বিপিএলের পর শ্রীলঙ্কা সিরিজ শেষে ছুটি চেয়েছেন। বিসিবিও বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখছে। এদিকে সাকিবের বর্তমান অবস্থা নিয়ে রংপুরের কোচ সোহেল ইসলাম বলেছেন, ‘সাকিবের পারফরম্যান্স এখন তো সবাই দেখছেন। যখন সে নিজের অবস্থানে ফিরতে সংগ্রাম করেছে তখন ফ্রাঞ্চাইজির মালিক থেকে শুরু করে আমরা সবাই তার পাশে থেকেছি। তার সময় দরকার ছিল। শুধু চোখের সমস্যা নয়, ফিটনেসও ভালোর দিকে ছিল না। এই জায়গা থেকে কেবল সময়টা দরকার ছিল। আমরা সবাই জানি, সাকিব যদি একবার ফিট হয়ে যায় তাহলে সে তার পুরোনো ঝলকে ফিরতে পারবে।’
সাকিব সেই পুরোনো ঝলকে ফিরেছেন। অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটারের ভাবনায় এবার বিশ্বকাপ। এই পারফরম্যান্স ধরে রেখে যদি সাকিব বাংলাদেশের জার্সিতে নামেন যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে, তাহলে সেটি টাইগার বাহিনীর জন্য বড় প্রাপ্তি হবে। বৈশ্বিক সেই আসরে দুয়ে দুয়ে চারও হয়ে যেতে পারে। সাকিব অনেক আগেই লক্ষ্য নির্ধারণ হিসেবে রেখেছেন ২০২৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে। সেই লক্ষ্যের কতটা পূরণ হবে, সেদিকেই এখন কোটি কোটি ভক্তের চোখ।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)