শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
২০১৩ সাল। তিবিলিসিতে একটা ফুটবল একাডেমির উদ্বোধনে গিয়েছিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। সেখানেই দেখা হয়েছিল একঝাক কিশোরের সঙ্গে। জর্জিয়ার একটা ফুটবল প্রজন্ম তখন ছিল ওই একাডেমিতে। খাভিচা কাভারাৎসখেলিয়া, মামারদাসভিলিসহ সবাই বেড়ে উঠেছিলেন ওই এক একডেমি থেকেই। সেই একাডেমির খেলোয়াড়রাই কাল আবার দেখা পেলেন রোনালদোর।
এবার অবশ্য দেখা হলো প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে। বেলায় বেলায় রোনালোদো এখন ক্যারিয়ারের গোধূলিবেলায়। আর তিবিলিসির সেই অ্যাকাডেমির ফুটবলাররা নেতৃত্ব দিচ্ছে জর্জিয়ান ফুটবলের। প্রথমবারের মতো জর্জিয়াকে ফুটবলের কোনো শীর্ষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে তারাই।
প্রথমবার ইউরো খেলতে আসা সেই দলটাই কিনা গতকাল রাতে হারিয়ে দিলো পর্তুগালকে। ইউরোর ইতিহাসেই অন্যতম বড় অঘটন বললে বাড়িয়ে বলা হয়না। ফ্রান্সের সাবেক ফুটবলার উইলি সাগনোলের অধীনে জর্জিয়া উপহার দিলো দীর্ঘদিন মনে রাখার মতো এক ম্যাচ। ২-০ গোলের এই জয়ে প্রথমবার ইউরোতে এসেই নকআউট পর্বে পা রাখলো ক্ষুদ্র এই দেশটি।
পর্তুগালের মতো দলের বিরুদ্ধে নামলেও শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল উপহার দেয় জর্জিয়া। ২ মিনিটের মাথায় পর্তুগালের ডিফেন্ডার অ্যান্তোনিয়ো সিলভার ভুল পাস ধরে বক্সে ঢুকে বাঁ পায়ের শটে গোল করে জর্জিয়াকে এগিয়ে দেন দেশটির ফুটবলের বড় তারকা কাভারাৎসখেলিয়া।
শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে ধীরে ধীরে খেলায় ফিরতে শুরু করে পর্তুগাল। ১৭ মিনিটের মাথায় প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে ফ্রি কিক পায় পর্তুগাল। শট ঠিকঠাকই নিয়েছিলেন রোনালদো। কিন্তু জর্জিয়ান গোলরক্ষক মামারদাসভিলি এদিন ছিলেন অন্যরকম ছন্দে। জোরালো সেই শট ফিরিয়ে দেন এই গোলরক্ষক।
২৯ মিনিটের মাথায় কর্নারে হেড করতে গিয়ে বক্সে পড়ে যান রোনালদো। পেনাল্টির আবেদন করেও পেনাল্টি পাননি। উল্টো প্রতিবাদ করতে গিয়ে হলুদ কার্ড হজম করতে হয় তাকে। পর্তুগাল চাপ বাড়ালেও জর্জিয়ার রক্ষণ ভাঙা যায়নি কোনভাবেই। জর্জিয়ার গোলরক্ষককের কৃতিত্বই এখানে বেশি। অন্তত দুবার দলকে বাঁচান মামারদাসভিলি। আর বিপরীতে কাউন্টার অ্যাটাকে বারবার পর্তুগালের পরীক্ষা নিয়েছিলেন কাভারাৎসখেলিয়া।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই গোল শোধ করার সুযোগ পান রোনালদো। কর্নার থেকে বল পেয়ে শট নেন। সেটাকেই আটকে দেন গোলরক্ষক। ৫৩ মিনিটেই আবার ভুল করেন সিলভা। লোকোসভিলিকে বক্সে ফাউল করেন তিনি। ভিএআর দেখে রেফারি পেনাল্টি দেন। এ বার গোল করতে ভুল করেনি জর্জিয়া। ঠান্ডা মাথায় ২-০ করেন মিকাউতাদজে। চলতি ইউরোয় নিজের তিন নম্বর গোল করলেন তিনি।
৬৫ মিনিটে উঠিয়ে নেয়া হয় রোনালদোকে। গোলের জন্য মরিয়া পর্তুগাল কোচ মাঠে নামালেন গঞ্জালো রামোসকে। কিন্তু দিনটা যে ছিল একান্তই জর্জিয়ার। আর গোলবারের নিচে মামারদাসভিলি ছিলেন প্রাচীর হয়ে। শেষ বাঁশি বাজতেই মাঠে নেমে পড়েন জর্জিয়ার কোচ, খেলোয়াড়সহ পুরো স্কোয়াড। গোলরক্ষক তখন উৎসবের কেন্দ্রে।
এমন এক জয়ের পর গ্রুপে ৩য় হয়েছে জর্জিয়া। আর সবমিলিয়ে ৩য় হওয়া দলগুলোর মাঝে তাদের অবস্থান দুইয়ে। প্রথমবার ইউরোর নকআউটে যাচ্ছে তারা। যেখানে বেশ শক্ত প্রতিপক্ষ অপেক্ষা করছে তাদের জন্য। দে লা ফুয়েন্তের স্পেনের বিপক্ষে মাঠে নামতে হবে তাদের।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)