বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১


ট্যুরিস্ট ভিসা দিচ্ছে না ভারত, ভিড় নেই বাংলাবান্ধায়

পঞ্চগড় থেকে

প্রকাশিত:১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:৩৩

ছবি সংগৃহীত

ছবি সংগৃহীত

জুলাই বিপ্লবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ-ভারতের বৈরী সম্পর্কের কারণে ভিসা দেওয়া বন্ধ রেখেছে ভারত। ফলে ভিসা না থাকায় বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশনে কমেছে যাত্রী পারাপার। স্বল্প সংখ্যক যাত্রীপারাপার হতে দেখা গেলেও তা সম্ভব হচ্ছে আগের ভিসাধারীদের জন্য। জানুয়ারিতে অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় যাত্রী পারাপার কমে যাওয়ায় প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে ইমিগ্রেশনটি।

ইমিগ্রেশন ঘুরে দেখা গেছে, যাত্রী পারাপারের অভাবে ইমিগ্রেশনটিতে অলস সময় কাটছে ইমিগ্রেশন সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের। দিনে গড়ে ৬০-৭০ জন যাত্রী পারাপার হচ্ছে এ রুট দিয়ে। ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এ ইমিগ্রেশন রুট দিয়ে ২২ হাজার ৪৯১ জন যাত্রী পারাপার হয়েছে। এর মধ্যে আগস্টে ৫ হাজার ৫০৫ জন, সেপ্টেম্বর ৫ হাজার ৬৪৫ জন, অক্টোবর ৫ হাজার ২৬৩, নভেম্বর ৩ হাজার ৪৩৮ জন ও ডিসেম্বরে ২ হাজার ৬৪০ জন।

ব্যবসা, পর্যটন ও চিকিৎসা সেবাসহ বিভিন্ন কারণে ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারিতে বাংলাবান্ধা-ভারতের ফুলবাড়ি স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশন সুবিধা চালু করা হয়। ভৌগলিক অবস্থানগত দিক থেকে একাধারে চারদেশের সঙ্গে ট্রানজিট সুবিধায় বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানে চলছে ব্যবসা-বাণিজ্য। ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি ইমিগ্রেশন সুবিধায় বন্দরটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে এ রুট ব্যবহার করে হাজার হাজার ভিসাধারী যাত্রীরা চলাচল করে আসছেন।

জানা যায়, বৃহত্তর রংপুরসহ সারাদেশ থেকে পর্যটকদের কাছে খুবই পছন্দনীয় এই বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট। ভারতের শিলিগুড়ি, দার্জিলিং, কাঞ্চনজঙ্ঘা, সিকিম, গ্যাংটক, ডুয়ার্সসহ বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় যাতায়াত এবং শিক্ষা, চিকিৎসা ও ব্যবসার নানা কাজে এ রুট ব্যবহার করে হাজার হাজার মানুষ। বাংলাদেশি পর্যটকদের ভ্রমণে ভারতের শিলিগুড়ি, কলকাতা, দার্জিলিং এলাকাগুলো সরগরম হয়ে থাকে।

অপরদিকে এ অঞ্চলের এপার-ওপার দুই বাংলায় রয়েছে মানুষের প্রচুর আত্মীয় স্বজন। এ জেলার উত্তরে ভারতের দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি জেলা, উত্তরপূর্ব ও পূর্বে জলপাইগুড়ি ও কুচবিহার জেলা এবং পশ্চিমে ভারতের পূর্ণিয়া ও উত্তর দিনাজপুর জেলা অবস্থিত। দেশভাগের পর থেকেই পশ্চিমবঙ্গের অনেক আত্মীয়-স্বজন রয়েছে দু’দেশের মানুষদের। ফলে ভিসার মাধ্যমে এসব মানুষরা সহজেই যাওয়া-আসার মাধ্যমে দেখে আসতে পারেন একে অপরকে।

বন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, বছরে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশিরা এ ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ব্যবহার করে ভারতে গিয়ে থাকেন। ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ ইমিগ্রেশন। বৃহত্তর রংপুর ও দিনাজপুর অঞ্চলের অসংখ্য রোগী, শিক্ষার্থীসহ পর্যটকরা ভারতে গিয়ে শিলিগুড়ি, দার্জিলিং ও মিনি বাংলাদেশে ঘুরে ফিরে কেনাকাটা করে থাকেন। এমনকি এখানকার অনেক স্থানীয় বাংলাদেশিরা বিয়ের কেনাকাটা করে থাকেন । কিন্তু বর্তমানে দু’দেশের মধ্যে চলমান অস্থিরতার কারণে ইমিগ্রেশন চালু থাকলেও ভারতীয় ভিসা না থাকায় ভারতে যাওয়ার অনীহা সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশিদের ।

স্থানীয় আহসান হাবীব জানান, ওপার বাংলায় আমাদের অনেক আত্মীয়-স্বজন রয়েছে। ভিসা থাকলে আমরা এ ইমিগ্রেশন ব্যবহার করে সেসব আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে যাওয়া সম্ভব হয়। শুধু আমার নয়, এ অঞ্চলে অনেকের আত্মীয় স্বজন রয়েছে ওপার বাংলায়। দেশভাগের পর আমরা দুই বাংলায় বসবাস করছি। ভিসার অনুমতি না থাকায় আমরা এখন যেতে পারছি না।

বাংলাবান্ধা অ্যাপল ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলের মালিক মাহবুবুল আলম মন্টু বলেন, ভৌগলিক অবস্থানগত দিক থেকে এ স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ১০ কিলোমিটার পার হলেই ভারতের শিলিগুড়ি। এখান থেকে ট্রেন, বাস ও বিমানে করে দার্জিলিং, কলকাতা, ডুয়ার্স, সিকিমসহ বিভিন্ন জায়গায় যেমন ঘুরতে যাওয়া যায়। তেমনি চিকিৎসার জন্য কলকাতা, চেন্নাই, হায়দারাবাদ গিয়ে চিকিৎসা নেওয়া যায়। পাশাপাশি শিক্ষা ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নেপাল ও ভুটানে যাওয়া অতি সহজ। মূলত জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে বাংলাদেশিদের ভিসা বন্ধ করে দেওয়ায় আমরা বিপদে পড়িনি, বিপদে পড়েছে ভারতই। কারণ সেখানকার পর্যটনে হোটেল-মোটেল ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে হাসপাতালগুলো মুখ থুবড়ে পড়েছে। যা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সেখানকার সচিত্র উঠে এসেছে।

বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ বলেন, বর্তমানে ইমিগ্রেশনটিতে যাত্রীপারাপার খুবই কম। প্রতিদিন গড়ে ৬০-৭০ জন যাত্রীপারাপার হয়ে থাকে। গত ১ জানুয়ারি থেকে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত ৯২১ জন পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপার হয়েছে। এসব যাত্রীর মধ্যে পুরাতন ভিসাধারীরা রয়েছেন, আর নতুন মেডিকেল ভিসাধারী রয়েছেন।

পঞ্চগড় আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ের সহকারী পরিচালকের সঙ্গে মো. এনায়েত উল্লাহ বলেন, গত ২০২৪ সালে পঞ্চগড় আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে প্রায় ১৪ হাজার মানুষ পাসপোর্ট করার জন্য আবেদন করেছিলেন।

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)
আরো পড়ুন

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

নামাজের সময়সূচি

ওয়াক্ত সময়সূচি
ফজর ০৫:২৩ ভোর
যোহর ১২:০৮ দুপুর
আছর ০৩:৫৭ বিকেল
মাগরিব ০৫:৩৬ সন্ধ্যা
এশা ০৬:৫৩ রাত

বুধবার ১৫ জানুয়ারী ২০২৫