মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২ মাঘ ১৪৩১
তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টার দিকে তাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস পাওয়া গেছে, আগামী ৭ দিনের মধ্যে এই ইস্যুতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নুরুজ্জামান এবং সরকারি তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শিপ্রা রাণী মন্ডলের উপস্থিতিতে।
এর আগে, সোমবার বিকেলে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা মহাখালী রেলক্রসিংয়ে অবস্থান নিয়ে রেলপথ অবরোধ করেছিলেন, ফলে ঢাকা-টঙ্গী রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় দুটি ট্রেন আটকা পড়ে এবং ঢাকা-কমলাপুর রেল যোগাযোগও স্থগিত হয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়, এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
এই আন্দোলন গত ১৮ নভেম্বরেও অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তখনও শিক্ষার্থীরা একই দাবিতে মহাখালীতে রেললাইন অবরোধ করেছিলেন। আন্দোলনকারীরা তাদের দাবির সপক্ষে স্লোগান দিতে থাকেন এবং রেলপথ বন্ধ করতে শুরু করেন। আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থী, আলী আহাম্মেদ বলেন, “আমরা আমাদের যৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলন করছি, তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা হোক।” তিনি আরও বলেন, “আমরা সাধারণ মানুষের কাছে ক্ষমা চাইছি, রাষ্ট্র আমাদের এখানে এনে দাঁড় করিয়েছে।”
এদিকে, আন্দোলনের কারণে মহাখালী থেকে জাহাঙ্গীর গেট পর্যন্ত সড়কপথ বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয় এবং যাত্রীদের চরম ভোগান্তি ঘটে। রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকায়, কমলাপুর থেকে আসা উপকূল ট্রেনটি আটকা পড়ে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ার কারণে পুলিশের পাশাপাশি ৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের আন্দোলনকারীদের কাছে দাবি জানান, “তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার যৌক্তিকতা থাকতে হবে, তবে এখন পর্যন্ত এমন কোনো যৌক্তিকতা পাওয়া যায়নি।” তিনি শিক্ষার্থীদেরকে তাদের আন্দোলন বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করতে আহ্বান জানান।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা জনগণকে অতিষ্ঠ করে ফেলেছে, তাদের আন্দোলন ক্যাম্পাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত। রেলপথ অবরোধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা ঠিক নয়।” তিনি আরও বলেন, “সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিয়েছে, তবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যদি অব্যাহত থাকে, তবে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পেছনে আওয়ামী লীগের ইন্ধন রয়েছে বলে দাবি করেছে সরকার। সোমবার বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকে তিতুমীর কলেজের আন্দোলনের পেছনে সরকারি দল সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যদি শিগগিরই স্থগিত না হয়, তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরকার জানিয়েছে, তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের বিষয়ে পূর্বে গঠিত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তবে আন্দোলনকারীদের অযৌক্তিক দাবির কাছে নতি স্বীকার করা হবে না।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)