বৃহঃস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
বিভিন্ন দাবি নিয়ে কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকরা। তাদের কর্মসূচি ঘিরে দিনভর উত্তেজনা গড়ায় হাতাহাতি ও কিল-ঘুসিতে।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে (শিক্ষাভবন হিসেবে খ্যাত) এ ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এতে করে অনেকটা উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে দুই পক্ষের কর্মসূচি শেষ হয়।
সরজমিনে দেখা যায়, ‘জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার’ পদে শতভাগ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারদের পদায়নসহ সাত দফা দাবিতে সকাল ৯টা থেকে শিক্ষাভবনে অবস্থান নেন সারা দেশের মাধ্যমিক উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা। তারা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করছিলেন।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সেখানে আসেন ৩৫তম থেকে ৪১তম বিসিএসে নন-ক্যাডার থেকে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ পাওয়া সহকারী শিক্ষকদের একটি গ্রুপ। তারা মিছিল নিয়ে শিক্ষাভবনে প্রদক্ষিণ করতে শুরু করেন। একপর্যায়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারদের কর্মসূচির মধ্যেও ঢুকে পড়েন এবং তাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া শুরু করেন। একপর্যায়ে দুই পক্ষ হাতাহাতিতে জড়ায়। এ সময় মোবাইল চুরি ও শিক্ষিকাদের লাঞ্ছিত করার ঘটনাও ঘটে।
পুরো ঘটনার জন্য সহকারী শিক্ষকদের দায়ী করেছেন মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসাররা। তারা বলেন, আমাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে তারা অর্তকিতভাবে ঢুকে হামলা চালিয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) প্রশাসন ও অন্যান্য নিয়মকানুন মেনে আমরা কর্মসূচি করেছি। যারা কর্মকর্তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে তাদের বিচার চাই।
জানতে চাইলে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. লিয়াকত আলী বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে তারা হামলা চালিয়েছে। হঠাৎ কয়েকজন শিক্ষক নামধারী আমাদের কর্মসূচির মধ্যে ঢুকে পড়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। শিক্ষাভবনে ন্যাক্কারজনক এ ঘটনা ঘটিয়েছে স্কুল শিক্ষকরা। তাদের ক্লাস রুমে থাকার কথা। মাউশির মহাপরিচালকের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
অন্যদিকে, মাধ্যমিক শিক্ষকরা বলেন, আমরা কারো ওপর হামলা করেনি। আমরা মিছিল করার সময় ব্যানার ধরে তারা টানাটানি করেছে।
শিক্ষাভবনে এসে এমন হাতাহাতিতে জড়ানোর ঘটনা তদন্ত করে জড়িতদের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক এ বি এম রেজাউল করীম।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১১টার পর মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষকরা দুই দফা দাবি নিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের কর্মসূচির মধ্যে ঢুকে পড়েন। তৃতীয় দফায় মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসাররা তাদের বাধা দেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ব্যানার টানাটানি ও হাতাহাতি শুরু হয়। তারা একে অপরকে কিল-ঘুসি মারতে থাকেন। হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন কয়েকজন শিক্ষিকাও। হাতাহাতির মধ্যে একজন মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের আইফোন চুরি হয়ে যায় বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরকারি স্কুলের সহকারী শিক্ষকদের পক্ষে আন্দোলনে আসা ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল নাহিয়ান বলেন, আমরা বিসিএস দিয়ে নন-ক্যাডারে শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছি। তারা (মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার) প্রজেক্টে নিয়োগ পেয়েছিলেন। পরে রাজস্বখাতে এসেছেন। তারা ২০ শতাংশের মতো জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পান। এখন দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সুযোগ সন্ধানীরা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পদে শতভাগ পদায়ন চাচ্ছেন। এটা মেনে নেওয়া হবে না।
যে দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি
উপজেলা শিক্ষা অফিসাররা বলছেন, জেলা শিক্ষা অফিসার পদটি রেখেছেন সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা। তারা এখন উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদে পদায়ন পেতে চান। এটা চরম বৈষম্য। কারণ জেলা শিক্ষা অফিসার পদে শিক্ষকদের পদায়ন করায় উপজেলা শিক্ষা অফিসাররা পদোন্নতি পান না।
ফলে সারাজীবন একই পদে চাকরি করতে হয় আমাদের। এখন নতুন করে উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদও শিক্ষকরা দখল করতে চাচ্ছেন। এমনটা হলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারদের পদোন্নতি নিয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার হওয়ার পথ একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে। এর প্রতিবাদে আজকের অবস্থান।
এদিকে, কর্মসূচিতে শিক্ষকদের সবচেয়ে বড় মোর্চা বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ পরিষদ এই চারটি সংগঠন সংহতি প্রকাশ করে অংশগ্রহণ করে।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)