বৃহঃস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
ছবি সংগৃহীত
জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে যে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা ঘটেছে- এ ধরনের হামলা যদি ফের কখনো ঘটে, তাহলে পাকিস্তানে আরও জোরালো ও কঠোর প্রত্যাঘাতের মাধ্যমে ভারত তার জবাব দেবে বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রাহ্মনিয়াম জয়শঙ্কর।
ভারতের লড়াই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয় বলেও দাবি করেছেন তিনি।
বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে এক সংবাদ সম্মেলনে মঙ্গলবার জয়শঙ্কর বলেন, আমরা সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জীবনযাপন করতে চাই না। তাই তাদের (পাকিস্তান) উদ্দেশে আমাদের বার্তা হলো— যদি এপ্রিলের হামলার মতো বর্বরোচিত ঘটনা ফের ঘটে, সেক্ষেত্রে প্রতিশোধ নেওয়া হবে; সেই প্রতিশোধের লক্ষ্যবস্তু হবে সন্ত্রাসী ও সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলো।
তারা কোথায় অবস্থান করছে— তা নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যাথা থাকবে না। যদি তারা পাকিস্তানের একদম ভেতরে ঢুকে অবস্থান নেয়, আমরাও পাকিস্তানের ভেতরে ঢুকে হামলা করব।
গত ২২ এপ্রিল ভারতের জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের অনন্তনাগ জেলার পেহেলগামের বৈসরন উপত্যকায় হামলা চালিয়ে ২৬ জন পর্যটককে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল দিয়ে হত্যা করে একদল সন্ত্রাসী। নিহত এই পর্যটকদের সবাই পুরুষ এবং অধিকাংশই হিন্দু ধর্মাবলম্বী।
এ ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয় দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) নামের একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই তৈয়বার একটি শাখা এই টিআরএফ।
এ ঘটনায় সিন্ধু নদের পানি বণ্টনচুক্তি ও পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিলসহ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কয়েকটি কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেয় ভারত। জবাবে ভারতের জন্য আকাশসীমা বন্ধ, ভিসা বাতিলসহ কয়েকটি পাল্টা পদক্ষেপ নেয় পাকিস্তানও।
দুই দেশের মধ্যে চলমান এই উত্তেজনার মধ্যেই গত ৭ মে পাকিস্তানের অধিকৃত কাশ্মীরসহ বিভিন্ন এলাকায় ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে এক সংক্ষিপ্ত সেনা অভিযান পরিচালনা করে ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনী।
নয়াদিল্লির তথ্য অনুযায়ী, এ অভিযানে ৭০ জন পাকিস্তানি সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। তবে পাকিস্তানের দাবি, নিহত হয়েছেন ১১ সেনাসহ ৫১ জন এবং আহত হয়েছে ৭৮ জন।
‘অপারেশন সিঁদুর’ এর পাল্টা জবাব দিতে তার দু’দিন পর ৯ মে ‘অপারেশন বুনিয়ান উম মারসুস’ শুরু করে পাকিস্তান। এতে ভারতে নিহত হন অন্তত ৩৬ জন এবং আহত হন কমপক্ষে ৪৬ জন।
যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে ১০ মে থেকে যুদ্ধবিরতি শুরু হলেও এখনও ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্য।
এদিকে পেহেলগামে হামলার ঘটনায় ভারতের পক্ষে এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জনমত গঠন করতে দেশে দেশে প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে নয়াদিল্লিতে আসীন কেন্দ্রীয় সরকার। সে রকমই একটি প্রতিনিধি দলকে সঙ্গে নিয়ে ইউরোপের দেশগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সফরে এসেছেন জয়শঙ্কর।
মঙ্গলবার ব্রাসেলসে ইইউ-এর প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট কাজা কালাসের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে জয়শঙ্কর বলেন, আমাদের লড়াই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয়।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হলো— আমার যেখানে সন্ত্রাসবাদ নির্মূলের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, সেখানে পাকিস্তান সন্ত্রাসাবাদে ডুবে আছে।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)